কক্সবাজারে সংকটাপন্ন বড় কচ্ছপকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সাগরে অবমুক্ত করল বনবিভাগ

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার •
জনমানব শুণ্য কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে বড় আকৃতির সামুদ্রিক কচ্ছপটি ( কাছিম) যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
ইনানী রেঞ্জের বনকর্মীরা সেখানে ছুটে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে সোজা নিয়ে আসেন ইনানী রেঞ্জ অফিসে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের দিকনির্দেশনায় সেখানে কচ্ছপটির যথাযত চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হয়। সুস্থ করে তুলে কচ্ছপটি সাগরে অবমুক্তও করা হয়। তাঁর মহতি উদ্যোগে এভাবে বেঁচে যায় সেই বিরল প্রজাতির কচ্ছপটি।
সংকটাপন্ন কচ্ছপটিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করার পর সমুদ্রে অবমুক্ত করে প্রশংসায় ভাসছেন দক্ষিণ বনবিভাগের এই বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা আর মহৎ এ কাজটির জন্য সব মহলে প্রশংসিত তিনি। চিকিৎসা শেষে গত ১৫ আগষ্ট বিকালে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে বিরল কচ্ছপটি সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়।
বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০ কেজি ওজনের বড় একটি সামুদ্রিক কচ্ছপ গত ১৪ আগষ্ট কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের ইনানী রেঞ্জ অফিস সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী সি-বীচে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন।
খবর পেয়ে ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা ও অন্যান্য বন কর্মীরা সংকটাপন্ন বিশাল আকৃতির কচ্ছপ উদ্ধার করে ইনানী রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসেন। কচ্ছপটি আঘাত প্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ ছিল বলে তাকে সুস্থ করে তুলতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের দিকনির্দেশনায় বনকর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা দেখে সকলে মুগ্ধ হন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের ভেটেরিনারি  চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমানকে বিষয়টি জানানো হয়।
তিনি উদ্ধারকৃত অসুস্থ কচ্ছপটির চিকিৎসা করান। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হলে উঠলে ১৫ আগষ্ট বিকালে চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের পরামর্শে বড় আকৃতির কচ্ছপটি সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়।
ভেটেরিনারি চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অসুস্থ কচ্ছপটিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করা হয়েছে। বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপটির ওজন প্রায় ৩০ কেজি। সমুদ্রে অবমুক্ত করার পর কচ্ছপটি তার আপন গতিতে সাগরে চলে যান।
এদিকে, পরিবেশ বিপর্যয় ও মানুষের নির্মম আচরণের কারণে বাংলাদেশ, ভারত এবং শ্রীলংকার সমুদ্র উপকূলে সামুদ্রিক কচ্ছপের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে ৷ নিরাপদ আশ্রয়স্থলের অভাবে কচ্ছপ ডিম পাড়তে পারছে না৷
অপরদিকে, জেলেদের জালে আটকা পড়ে ও সমুদ্র দূষণের ফলে এ প্রাণী মারা যাচ্ছে ব্যাপক হারে৷ এতে ভারতমহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগর উপকূল থেকে কচ্ছপ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পরিবেশবাদীরা ৷ এই সামুদ্রিক কচ্ছপ উপকূলের পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করে আসছে ৷ শুধু ডিম পাড়ার সময় স্ত্রী কচ্ছপ বালুচরে উঠে আসে ৷ নির্জন-নীরব সৈকতে জোয়ারের সর্বোচ্চ সীমার ওপরে শুকনা বালুচরে স্ত্রী কচ্ছপ ডিম পাড়ে ৷ শুকনা বালু সরিয়ে গর্ত করে এক একটি স্ত্রী কচ্ছপ ডিম পাড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ৷ প্রায় ২ মাস পর ডিম ফুটে বাচ্চাগুলো বালির নীচ থেকে ওপরে বেরিয়ে আসে এবং প্রাকৃতির নিয়মেই সমুদ্রে চলে যায়৷
বাংলাদেশের সামুদ্রিক কচ্ছপ পশ্চিমে সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ-পূর্বের কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বিচরণ করে বলেই জানা যায় ৷
প্রতি বছর জেলেদের জালে প্রচুর কচ্ছপ আটকা পড়ে ৷ এসব কচ্ছপকে তারা মেরে ফেলে ৷ আদিবাসী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম খায় ৷
এছাড়াও উপকূল দূষণের ফলে কচ্ছপের মৃত্যু এবং বংশ বৃদ্ধি মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

আরও খবর