জার্নাল ডেস্ক •
করোনায় জুলাইয়ে কক্সবাজার জেলায় ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫৫৯৮ জন। জুলাইয়ের রেকর্ড মৃত্যু আর আক্রান্তের পথেই চলছে আগষ্টের ভয়ংকর যাত্রা ।
চলতি মাসে প্রথম ৩ দিনে করোনায় জেলার ১১ জনের প্রান গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ৬৯৯ জন। সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন আগস্ট আরও ভয়ঙ্কর হবে।
প্রতিদিন যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ঠরা। রোগীর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গ্রামেও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে খুব দ্রুত। একেক দিন একেক উপজেলায় রোগী বাড়ছে। এছাড়া জেলায় করোনা বেড় খালিও পাওয়া যাচ্ছে না সহসা।
কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৫ জন। এতে মারা গেছে ২০২ জন। এরমধ্যে সদরে ৭২৬৩, রামুতে ১০৭৭, উখিয়ায় ২৪০৩, চকরিয়ায় ১১৯৭,টেকনাফে ২২৩৫, পেকুয়ায় ৫৪২, কুতুবদিয়ায় ২১৩ ও মহেশখালিতে ১০৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া উখিয়া ও টেকনাফের ২৫৭১ জন রোহিঙ্গা আক্রান্ত হয়েছেন।
কক্সবাজারে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, জেলায় মোট আক্রান্ত ১৮৫৩৫ এবং মৃত ২০২ জন। যার মধ্যে চলতি বছরে ১২৮৩৩ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১০৮ জন। আর সর্বোচ্চ জুলাইয়ে ৫ হাজার ৫৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৬৪ জন। চলতি মাসে ১১ জন মৃত্যুর পাশাপাশি ৬৯৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
সিভিল সার্জনের পরিসংখ্যাবিদ পঙ্কজ পাল বলেন, ভয়ংকররূপে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। জেলার সর্বমোট আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশ গত ৩৩ দিনে। এতে মারা গেছেন ৭৫ জন। যা চলতির বছরের অন্যান্য মাসের সর্বমোট মৃত্যুর দ্বিগুন। তার দেয়া তথ্যে মতে, ৩ জুলাই শহরের টেকপাড়া ও সিটি কলেজে এলাকার দুইজন, চৌফলদন্ডিতে ১ জন, ঈদগাঁওয়ে ১জন, রামু গর্জনিয়ার ১ জন এবং পেকুয়ায় ১ জন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
একই দিন জেলা ২৩২ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এতে সদরে ৭৮, রামুতে ১৬, উখিয়ায় ৩৪, চকরিয়ায় ১৮, টেকনাফে ৪৫, পেকুয়ায় ৯, কুতুবদিয়া ১০ এবং মহেশখালিতে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া উখিয়া ও টেকনাফে ১২ জন রোহিঙ্গা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। ২ জুলাই জেলাতে ৩ জন মৃত্যুর পাশাপাশি ২৩৩ জন আক্রান্ত হয়। ১ জুলাই ২৩৪ জন আক্রান্ত ও ২ জন মারা যায়।
এছাড়া জুলাইয়ে ৫৫৯৮ জন আক্রান্তের বিপরীতে ৬৪ জন মারা গছে। জুনে আক্রান্ত ১,৯৬৬ ও মৃত ১৫ জন। মে মাসে আক্রান্ত ২০৫২ এবং মৃত ১৪ জন । এপ্রিলে ১‘৭৪৮জন আক্রান্ত ও মৃত ১৪। মার্চে ৫৩৭ জন জন আক্রান্ত। ফেব্রুয়ারিতে ৯৯ এবং জানুয়ারিতে ১৩৪ জন আক্রান্ত হয়।
বর্তমানে জেলা শহরে পাশাপাশি উপজেলায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ।
চিকিৎসকরা বলছেন ভারতীয় ধরনের (ডেল্টা প্রজাতি) জেলায় সংক্রমণ হার বাড়ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালেও রোগীর তিল ধারণের জায়গা নেই। হাসপাতালে শয্যার জন্য হাহাকার পড়ে গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে এতো সংখ্যাক রোগী বাড়ছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ গতি পেয়েছে। এছাড়া যারা বাসায় আক্রান্ত হন, অধিকাংশ আইসোলেশনে যায় না। সবার সাথে মেলামেশা করার ফলে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সংক্রমন বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাজাহান নাজির বলেন, করোনা সংক্রমন রোধ করতে হলে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়ার অভ্যাস থাকতে হবে। ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শাহীন মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, হাসপাতালের করোনা বেড খালি নাই। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী আসছে। রোগির চাপ সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, করোনায় জুলাইয়ে জেলাতে রেকর্ড মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়েছে। আগস্টের শুরুতে সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ভীড় ও অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করতে হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-