৮৬ কোটি টাকা মেরে খাওয়ার অভিযোগ

কক্সবাজারে জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম: ফাঁসছেন ১৯ আমলা!

চট্টগ্রাম প্রতিদিন •

কক্সবাজারের মেগা প্রকল্প তিন দশমিক পাঁচ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম ও দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা তদন্তে।

কক্সবাজার তিনটি প্রকল্পের নানা অনিয়মের তদন্ত শেষে কমিশন বরাবরে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। ওই তিন প্রকল্প থেকে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ মেলেছে তদন্তে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়েছে দুদক। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে সম্পদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানিয়েছে, কক্সবাজারে তিনটি প্রকল্পে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে কক্সবাজার জেলার সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বপালনকারী বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের অন্তত ১৯ জন আমলার। এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে মোট ১৫৫ জনকে। এদের মধ্যে আরও রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সরকারি কর্মচারীদেরও।

দুদকের তদন্তে অভিযুক্ত আমলা ও সরকারি কর্মকর্তারা হলেন— কক্সবাজার জেলার সাবেক প্রশাসক ও বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামাল হোসেন (৫০), কক্সবাজার জেলার সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার (৪২), কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. শামীম হোসাইন (৩৭), কক্সবাজার জেলার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাজাহান আলী (৪১), কক্সবাজার সদর থানার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে সিলেট জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এএইচএম মাহফুজুর রহমান (৪৫), কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও বর্তমানে পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. শহিদুল হক (৪২), কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. রেজাউল করিম (৪২), কক্সবাজার জেলার সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) ও বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এসএম সরোয়ার কামাল (৪৫)।

অভিযুক্তদের তালিকায় আছেন— কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএল শাখার সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকতা ও বর্তমানে কুমিল্লা জেলার লালামাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব (৩৩), কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্রাবন্তী রায় (৪২), কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও বর্তমানে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ (৪৩), কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বর্তমানে বিআরটিএ সহকারী কমিশনার ও নির্বার্হী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও বর্তমানে লক্ষ্মীপুর রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মোমিন (৩৯), কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নুর হোসেন, কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন

এছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে আরও রয়েছেন— কক্সবাজার জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও প্রকল্প পরিচালক বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান (৪৩), কক্সবাজার জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও প্রকল্প পরিচালক বর্তমানে পুলিশ হেড কোয়ার্টাসের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডমিন) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং কক্সবাজার জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম (৪৫)।

জানা গেছে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) জমি অধিগ্রহণে অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ২৮ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন কক্সবাজার শহরের সৈকতপাড়ার মৃত নুরুল কবিরের পুত্র ভূক্তভোগী নুরুল আলম। এ মামলায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে ৬ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ১৪ জনকে আসামি করা হয়।

পরে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ৯৩ লাখ টাকা ঘুষের টাকাসহ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ার মো. ওয়াসিমকে আটক করে র‌্যাব। এ ঘটনার পরপরই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেই কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২।

আরও খবর