বিশেষ প্রতিবেদক •
কক্সবাজারের সাথে রাজধানী ঢাকার সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বন্দর নগর এবং সমুদ্র তীরবর্তী পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে মেগা প্রকল্পসমূহের অর্থনৈতিক সুফল পেতেই চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সংযোগ স্থাপন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায়, ৭৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার টঙ্গী থেকে চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত রেল সংযোগ ডাবল ব্রড গেজ লাইনে রূপান্তরের পরিকল্পনার পাশাপাশি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ নির্মাণাধীন রয়েছে।
প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৪৭০ কিলোমিটারের রেলপথ স্থাপিত হবে।
তবে, টঙ্গী এড়িয়ে ৯০ এর দশকে বাস্তবায়িত না হওয়া ঢাকা-কুমিল্লা কর্ড লাইন স্থাপিত হলে ৯৪ কিলোমিটার পথ এবং ভ্রমণের দুই ঘন্টা সময় বাঁচানো সম্ভব হতো।
এছাড়া, নতুন প্রকল্পের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এড়িয়ে ফৌজদারহাট-ষোলশহর কর্ড লাইন নির্মাণ করা হবে। এর ফলে অন্তত এক ঘন্টা সময় বাঁচবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সমীক্ষা জরিপ সম্পন্ন
ঢাকা-চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেল স্থাপনের প্রস্তুতিমূলক সুবিধার জন্য কারিগরি সহায়তা শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক মো. আবিদুর রহমান বলেন, “সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। এখন বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রস্তুতি চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে আলোচনা চলছে। অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার পরই মূল প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা যাবে।”
রেল সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চলে রেলের ব্রড গেজ লাইন স্থাপন হলে পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও খুলনার সঙ্গেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। কারণ, পশ্চিমাঞ্চলে ব্রড গেজে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও পূর্বাঞ্চলে এখন অবধি মিটার গেজ রেল চলছে।
ঢাকা পর্যন্ত ব্রড গেজ লাইন থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরো রুট মিটার গেজে রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, পূর্বাঞ্চলে ব্রড গেজ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে ট্রান্স-এশিয়ার রেলওয়ে কানেক্টিভিটি স্থাপনের বাধাও দূর হবে। ট্রান্স-এশিয়ার রেলওয়ে কানেক্টিভিটির মাধ্যমে চীন, পাকিস্তান, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।
ইংরেজরা ১৯৩১ সালে চট্টগ্রামে ষোলশহর-দোহাজারী লাইন নির্মাণের পর বিশ্বব্যাপী যুদ্ধাবস্থার কারণে দোহাজারীর পরে রেল লাইন নির্মাণ করতে পারেনি। এরপর, গত ৯০ বছরেও কক্সবাজারে রেল লাইন যায়নি।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণের মাধ্যমে প্রায় এক শতাব্দীর পর রেলের সুযোগ পাচ্ছে কক্সবাজারবাসী।
কক্সবাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে যুক্ত হবে ঢাকা
পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুর, হংকংসহ দ্বীপভিত্তিক অর্থনৈতিক হাবগুলোর আদলে কক্সবাজারকে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার।
মাতারবাড়িতে নির্মাণ হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর।
এছাড়া, চট্টগ্রামের বে-টার্মিনান এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার রেলপথের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ কারণে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে রেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজও শেষ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা থেকে দোহাজারী রেল পথের উন্নয়ন কাজ আট ভাগে হবে। ১২ টি নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে রেল সেতু।
প্রকল্পটিতে, আনুষঙ্গিক কাজের পাশাপাশি নতুন একটি অভ্যন্তরীন কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) সংস্কার এবং পুবাইল ও ধীরাশ্রম রেল স্টেশন থেকে আইসিডিতে নতুন রেলপথ যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মহেশখালীতে প্রস্তাবিত মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথেও যুক্ত হবে এই রেলপথ।
এছাড়া, রেলওয়ের একাধিক অফিস নির্মাণের পাশাপাশি রেলওয়ের বগি, ওয়াগন, লোকো ইঞ্জিন মেরামত কারখানা, জ্বালানি সুবিধা ও ব্রড গেজের জন্য ডিপো স্থাপন করা হবে।
টঙ্গী খাল, বালু, শীতলক্ষা, আরিয়াল খাঁ নদী, পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদী, মেঘনা, ছোট্ট ফেনী, মুহুরী, ফেনী, কর্ণফুলী, মাতামুহুরী শাখা এবং পুরাতন মাতামুহুরী নদীর ওপর নির্মিত হবে রেলসেতু।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-