গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল •
পবিত্র কোরবানী ঈদুল আযহা উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফসহ চট্রগ্রাম বিভাগের দক্ষিনে অবস্থিত বিভিন্ন জেলা-উপজেলা গুলোতে হু হু করে বেড়েই চলছে কোরবানীর পশুর দাম।
এদিকে ঢাকাসহ দেশের উত্তরে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত খামারিদের কথা চিন্তা করে চট্রগ্রামের দক্ষিন সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত মিয়ানমার থেকে আসা গবাদিপশু আমদানির স্থান টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে একমাত্র করিডোরটি হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষনা করেছে সরকার।
এতে অত্র এলাকা গুলোতে কোরবানী পশুর সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বেকাদায় পড়েছে অত্র এলাকার জনগণ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়,গবাদিপশু ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আমদানি করে প্রতি বছর সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দিচ্ছে।
অথচ মিয়ানমার গবাদিপশু আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
পাশাপাশি অত্র এলাকায় গবাদিপশুর দাম বেড়েই চলছে গবাদিপশুর সংকট বেড়ে যাওয়ার কারনে অনেকেই কোরবানি করতে পারবেনা বলে জানান দেশের সর্ব দক্ষিণের একমাত্র মিয়ানমার কেন্দ্রিক করিডোর ব্যবসায়ীসহ কোরবানির পশু ক্রেতারা।
এদিকে দেশের খামারিদের লোকসানের কথা চিন্তা করে গতকাল শুক্রবার থেকে দক্ষিন চট্রগ্রামের একমাত্র করিডোর টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। এর পর পরই উখিয়া-টেকনাফ তথা দক্ষিন চট্রগ্রামের মানুষের কোরবানি পশু সংকটের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশপাশি হাট বাজারে দুই-তিন গুন দাম বৃদ্ধি পেয়েছে গবাদিপশুর।
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোরের গবাদিপশু আমদানিকারক সমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ মনির জানান, ‘হঠাৎ করে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অত্র কক্সবাজার জেলায় গবাদিপশুর সংকট চরম আকার ধারন করেছে। তাছাড়া গরুর হাট বাজার গুলোতে দামের উর্ধগতি বেড়েই চলছে। এই সংকট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দায়িত্বরত সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের খামারীদের উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি করোনা সংক্রমনকে মাথায় রেখে সরকারের নির্দেশে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি কেউ আইন অমান্য করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পাশপাশি হাট বাজারগুলো নজরদারি বাড়ানো হবে।’
এদিকে কক্সবাজার জেলায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাসহ ৩৫ লাখ মানুষের বসতি। অধিকাংশ এসব মানুষের কোরবানি পশু নির্ভরশীল মিয়ানমার থেকে আসা গবাদিপশু উপর। এছাড়া মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু বন্ধ হওয়ায় হাট বাজারে পশু দাম দুই-তিন গুন বেড়েছে। ফলে অঞ্চলের প্রায় দশ হাজার মানুষ কোরবানি পশু নিয়ে চিন্তিত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ চলতি মাসে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুইদিনে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে গরু-মহিষ আসছে ৩ হাজার ১৩০টি। তার বিপরীতে সরকার ১৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা রাজস্ব পেয়েছেন। এর আগে গত মে ও জুন এ দু’মাসে মিয়ানমার থেকে ২৫ হাজার ৮৬৮টি গরু ও ৪ হাজার ২৫৮টি মহিষ আমদানি করা হয়েছে। আর আমদানি বাবদ এক কোটি ৫০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করেছে শুল্ক বিভাগ।
এ বিষয়ে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি জানান,‘মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধ হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এবার কোরবানি পশু ক্রয় নিয়ে বেকাদায় পড়েছে। কারন গত কয়েক দিনের ব্যবধানে কোরবানীর পশুর মুল্য দ্বীগুন হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন স্থানীয় জনগনের পাশাপাশি অত্র আসনে বসবাস করছে ১১ লাখের বেশী রোহিঙ্গা।
তাছাড়া দক্ষিণ চট্রগ্রামে খামারিদের সংখ্যাও কম।
লকডাউনের কারনে ঢাকাসহ উত্তর অঞ্চল থেকে খামারিরা এদিকে গবাদিপশু আনছে না। এতে হাট বাজারে পশুর দামও প্রতিনিয়ত হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারই ধারবাহিকতায় কক্সবাজারসহ দক্ষিন চট্রগ্রামে কোরবানি পশু’র সংকট দেখা দিয়েছে। এমত অবস্থায় বিশেষ বিবেচনায় মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের এক মাত্র করিডোর খুলে দিয়ে এ সংকট নিরসন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ করছি।’
গরু-মহিষ ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ জানান, ‘মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় সামনে সংকট চলছে। ইতি মধ্য হাট বাজারগুলোতে গরু-মহিষের দাম কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কোরবানীর গরু যারা ক্রয় করছে এক মন গরুর মাংস ৩০ হাজার টাকা দাম পড়বে।
তিনি জানান, ‘তাছাড়া পর্যাপ্ত পশু না থাকায় অনেক মানুষ এবার পশু কোরবানি দিতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি পুনরায় খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-