বিশেষ প্রতিবেদক •
করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে করোনায় মৃতূ্য এবং সংক্রমণের লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বেড়েছে চলছে সংক্রম। প্রতিদিন শনাক্তের রেকর্ড ভাঙছে। কঠোর লকডাউন দিয়েও ঘরে রাখা যাচ্ছে না জনসাধারণকে।
পরিস্থিতি এতোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এখন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেও মিলছে না সিট।কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১৪০ বেডের সবগুলোই এখন করোনা রোগীতে পরিপূর্ণ।আর গত ১০ দিনে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মৃত্যূ হয়েছে ১৫ করোনা রোগীর।
শুক্রবার কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সদর উপজেলা ও পৌরসভার ১০৪ জন এবং ৬৪ রোহিঙ্গাসহ রেকর্ড ২৮২ জন৷ আর নতুন করে মৃত্যূবরণ করেছে ১ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ হাজার ৫৭৫ জনে এবং মৃত্যূবরণ করেছেন ২১ রোহিঙ্গাসহ ১৩৬ জন।
সর্বশেষ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া রোগী হলেন টেকনাফ শরনার্থী শিবিরের মোহছেনা খাতুন (৪৫)।
তিনি গত ৬ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ৮ জুলাই মৃত্যূ হয়।
এদিকে শুক্রবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান,জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০৪ জন। তন্মধ্যে সদর উপজেলা ও পৌরসভার ৭৩ জন,উখিয়া উপজেলায় ২৭ জন,টেকনাফ উপজেলায় ১৭ জন,চকরিয়া উপজেলায় ১ জন,রামু উপজেলায় ৫ জন,পেকুয়া উপজেলায় ২ জন,মহেশখালি উপজেলায় ৬ জন,কুতুবদিয়া উপজেলায় ১জন এবং ৬০ জন রোহিঙ্গা। নেগেটিভ ছিলেন ৬১৬ জন । ফলোআপ ছিলেন ৫ জন।
অপরদিকে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭৩৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এনিয়ে জেলায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪০৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনাভাইরাসে ২২৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।এছাড়া ২৪ ঘন্টায় ১১০টি র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে সদরে ৩১ জন,উখিয়ায় ১ জন এবং ৪ জন রোহিঙ্গা পজিটিভ হয়েছেন।
এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ হাজার ৫৭৫ জনে। সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৬২১ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৪৪৩ জন। নতুন করে ১ জনের মৃত্যূ হয়েছে। জেলায় করোনায় এখন পর্যন্ত মোট ২১ রোহিঙ্গাসহ ১৩৬ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে সর্বাধিক কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলাতেই ৬৭ জনের মৃত্যূ হয়েছে। আক্রান্তের দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছে এই এলাকা।এছাড়া জেলায় করোনাক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১ হাজার ৯৮০ জন।এর মধ্যে উখিয়ায় ১৭৪২ জন এবং টেকনাফে ৩৩৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৬৬৫ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ২৯৪ জন।
এদিকে কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ তৎপরতা শুরু করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
১লা জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা রোগীরা যাতে সাধারণ মানুষের স্পর্শে আসতে না পারে ও মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে করোনার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে রোগীর সংখ্যা কমানো তথা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিয়ে আরো বেশি করে গণসচেতনতা তৈরির উপর গুরুত্ব এবং লকডাউন অর্থবহ করতে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশসানকে আরো কঠোর ভূমিকা রাখার আহবান জানান সচেতন মহল।
শুধু প্রধান সড়ক বা শহরের মধ্যে অভিযান সীমাবদ্ধ না রেখে শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অভিযান পরিচালনার পরামর্শ দেন তারা।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন মারাত্বকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থায় চলমান লকডাউনে জেলার সর্বত্র সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জনগণ যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারে তাহলে করোনা সংক্রমণের হার কমে যাবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-