কক্সবাজারে মামলা-জরিমানা করেও থামানো যাচ্ছে না মানুষের চলাচল

এম.এ আজিজ রাসেল :

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি তো হচ্ছেই না, বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণের হার রেকর্ড ভাঙছে। কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৪ জুলাই বিধিনিষেধের এই মেয়াদ শেষ হবে ১৪ জুলাই।

লকডাউনের শুরু থেকেই বাস্তবায়নে কক্সবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযৌক্তিক কারণে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত গ্রেফতার ও জরিমানা করছেন। এ ছাড়া জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখানো ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তল্লাশির সময় আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে তারা তাদের গন্তব্যে বা কর্মস্থলে যেতে পারছেন। কঠোর বিধিনিষেধের ষষ্ঠ দিনেও বেশ সক্রিয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিভিন্ন এলাকায় মোড়ে মোড়ে আছে পুলিশের চেকপোস্ট। বিভিন্ন চেকপোস্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের সচেতনতার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা ও মামলা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে বিধিনিষেধ না মানার প্রবণতা দেখা গেছে মানুষের মধ্যে। অনেকেই ঘর থেকে রাস্তায় বের হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আটকও করা হচ্ছে।

লকডাউনের ষষ্ঠদিনে শহরে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পথচারী ও নানা প্রয়োজনে বের হওয়া শহরবাসীর চলাচলও। রাস্তায় যানবাহনের পরিমাণ বাড়লেও বিভিন্ন পয়েন্টে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে। মঙ্গলবার শহরের বাজারঘাটা, পান বাজার সড়ক, বড় বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও সতর্ক করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান।

বিধিনিষেধ না মানায় জরিমানা

কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠদিনে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করায় ১৯৩ জনকে ২ লাখ ২৮ হাজার ৮৮০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসময় মামলা করা হয়েছে ১৯৩টি। মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) জেলার ৮ উপজেলায় পৃথক ২৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এ জরিমানা করা হয়। সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার কাজী মাহমুদুর রহমান এসব তথ্য জানান।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান জাহিদ খান ও সাদিয়া সুলতানা বলেন, যারা বাইরে আসছেন, তারা জরুরি সেবায় নিয়োজিত। তারপরও শুধু জরুরি সেবায় নিয়োজিত লেখা দেখলেই যে ছেড়ে দিচ্ছি তা নয়, আমরা প্রতিটি গাড়ি তল্লাশি করছি ও আরোহীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে পারলে ছেড়ে দিচ্ছি। প্রমাণ দেখাতে না পারলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।

পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, এখন বিশেষ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করছি। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করছি। সচেতনতার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে অন্যান্য আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। বিধিনিষেধ ভেঙে বাইরে বের হওয়া ব্যক্তিদের প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা বা কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি জনসাধারণকে সচেতন করতে। ধয্যর্ ধরে আর কিছুদিন ঘরে থাকুন। এতে সবার জন্য নিরাপদ। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় লকডাউন বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যক্তি—পরিবার, সমাজ, দেশকে করোনা থেকে সুরক্ষার দিকটা বিবেচনায় আমরা কঠোরভাবে সরকারী বিধিনিষেধ পরিপালনের চেষ্টা করছি। একান্তই জরুরি ও অত্যাবশ্যক কারণ ছাড়া বা বিধিনিষেধের নির্দেশনার আওতার বাইরে যারা রয়েছেন তারা শুধু বের হতে পারছেন। এর বাইরে আমরা কিন্তু চেকপোস্ট বসিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি, যাদের কারণ যথোপযুক্ত মনে হচ্ছে না তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। অনেকে বিনা প্রয়োজনেও ঘুরতে বের হচ্ছেন এজন্য তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা জরিমানার চেয়ে সচেতনতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যাদের মাস্ক নেই তাদেরকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে সচেতন হয়েছে কি—না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা নিয়ম ভঙ্গ করতে অভ্যস্ত। বেশিরভাগ মানুষকেই সচেতন হতে দেখা গেছে। আগের তুলনায় মানুষের মাস্ক পরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ১ জুলাই সাত দিনব্যাপী কঠোর লকডাউন চলমান থাকা অবস্থায় করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটলে গতকাল সোমবার নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সময়সীমা আরো সাত দিন বাড়িয়েছে সরকার। সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের নির্দেশনা জারি করে সরকার। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে মাস্ক পরে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার কথাও বলা হয় নির্দেশনায়। বন্ধ রয়েছে সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস। ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে কঠোর লকডাউন।

আরও খবর