অনলাইন ডেস্ক •
বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া এক রোহিঙ্গা যুবক বডিবিল্ডিংয়ের আইসিএন ক্ল্যাসিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। নুর কবির নামের ওই যুবক প্রথম রোহিঙ্গা যিনি এই ধরনের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির গড়লেন।
রোববার দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৫ বছর বয়সী নুর এখন জাতীয় সংস্করণের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অনুশীলন করছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে হবে আসরটি।
নিজের অতীত জীবন সম্পর্কে নুর বলেন, ‘ক্যাম্পে থাকার দিনগুলোতে ঠিকমতো খেতেই পারতাম না, না ছিল পর্যাপ্ত খাবার, না ছিল রুটি-পানি। বিশুদ্ধ পানিরও বড় অভাব ক্যাম্পে। আদের কখনো কখনো এক বেলা খেয়ে থাকতে হতো।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্যাম্পের বাইরে যেতে দেয়া হতো না আমাদের, তাই রেশনের দিকে চেয়ে থাকতে হতো। এক রুমে থাকতাম পাঁচজন।’
নুর কবির জানান, মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেন। পরিবারের কাউকে কিছু না বলে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
তিনি বলেন‘মা প্রায় দুই সপ্তাহ আমার খোঁজ পাননি। ভেবেছিলেন হয়তো মরে গেছি।’
অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে দুই বছর কমিউনিটি ডিটেনশন ক্যাম্পে বাস করেন নুর। এরপর সাময়িকভাবে থাকার জন্য অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ব্রিজিং ভিসা পান।
ভিসা পাওয়ার পর ফর্কলিফ্ট ড্রাইভারের চাকরি নেন নুর। ২০১৭ সালে শরণার্থীশিবিরে ফিল নিক্সন নামের একজন জিম ট্রেইনারের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সেই থেকে শুরু।
নুর বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে জাস্ট মজা করতে জিমে গিয়ে ফিলের সঙ্গে পরিচয়। আমাকে বললেন ফিটনেস নিয়ে পড়াশোনা করলে ভালো করবো।’
ফিটনেস নিয়ে ঘাটতে ঘাটতে গত বছর সাইমন স্ট্রোকটনের সঙ্গে পরিচয় হয় নুরের। তার সঙ্গে কথা বলে বডিবিল্ডিংয়ে আগ্রহ বাড়ে।
স্ট্রোকটন এবিসিকে বলেন, ‘ওর গল্প শুনে আমি অবাক হই। এমন মানুষের সফল হওয়ার তীব্র ইচ্ছা থাকে। নুর সেই ইচ্ছাটা জাগিয়েছে। আমি বিনা মূল্যে ওকে কোচিং করিয়েছি।’
স্ট্রোকটন জানান, নুর প্রথম শোতে বেশ ভালো করলেও প্রথম না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। এরপর আরও পরিশ্রম শুরু করেন।
‘নুর আইসিএন ক্ল্যাসিক প্রতিযোগিতায় লড়ছিল রোজার সময়। প্রথম শোয়ের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ও আমূল বদলে যায়। ভেতর থেকে আলাদা একটা শক্তি অনুভব করে।’
স্ট্রোকটনের কথায়, ‘রোজার কারণে সারা দিন খেতে পারতো না। শুধু রাতেই খেত। ও খুব বিনয়ী। বিরল প্রতিভা।’
প্রথম রোহিঙ্গা হিসেবে এমন রেকর্ড গড়ে নুর এখন গর্বিত। স্বপ্ন তার আকাশ ছোঁয়ার, ‘শরণার্থী ব্যাকগ্রাউন্ডই আমার শক্তি। যে লড়াইটা আমি ক্যাম্পে করেছি, সেটা এখন করছি অনুশীলনে। রোহিঙ্গাদের জন্য আমার এই লড়াই।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-