অনলাইন ডেস্ক •
সামনের সারিতে বসা দর্শকদের দৃষ্টি তার শরীরজুড়ে। সুন্দরী শিউলির নাচে মুগ্ধ তারা। মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শিউলির শারীরিক সৌন্দর্যও। উর্দু গানের সঙ্গে নাচ। শুরুতেই নিজের আলতা রাঙা পা প্রদর্শন করেন বিশেষ কায়দায়। তারপর তা ধিন ধিন তা .. তালে তালে শরীর দুলাতে থাকেন শিউলি। একপর্যায়ে উড়ে যায় মুখঢেকে রাখা ওড়নাটি। উন্মুক্ত হয় মুখ, সেইসঙ্গে পেটের নিচের অংশটাও স্পষ্ট দেখা যায় তার।
নাচতে নাচতে দর্শক সারিতে চলে যান শিউলি। বকশিস দিতে পারেন এমন দর্শককে টার্গেট করে তার কোলে বসেন। ড্যান্স ফ্লোর খালি নেই, অন্য মেয়েরা নাচছে। এদিকে দর্শকের মুখে-গালে ততক্ষণে শিউলির লিপিস্টিকের রঙ লেগে গেছে। রাত ১১টা পর্যন্ত নেচে ভালোই বকশিস পেলেন শিউলি। নাচে-গানে ও তাড়ি পান করে দর্শকদের অনেকেই বুঁদ হয়ে যান।
রাত ১১টার পর ঘটে ভিন্ন কাহিনী। দর্শকদের অনেকেই পেতে চাইতো শিউলিকে। এ নিয়ে দর্শকদের মধ্যেই ঝগড়া হয়েছে অনেকবার। জোর করেই কেউ কেউ শিউলিকে রাতের সঙ্গী করতে চাইতেন। প্রায় রাতেই একাধিক পুরুষের ডাকে সাড়া দিতেন শিউলি। রাত কাটাতেন পাশের ছোট্ট ঘরটিতে। অর্থ উপার্জনের জন্যই নিজের রুপ-যৌবন এভাবেই বিলিয়ে দিতেন তিনি।
গল্পটি আশির দশকের শেষের দিকের। ঢাকার ইংলিশ রোডের তাড়িখানায় নিয়মিত ছিলেন শিউলি। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর এক সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে এই পথ বেছে নেন তিনি। এখন বয়স বেড়েছে। কিন্তু পথ ছাড়েননি। এখনও সন্ধ্যার পর সেজেগুজে বের হন। তবে এখন উদ্দেশ্য ভিন্ন। শ্যামলি এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। তার বাসায় থাকে তিন তরুণী। এই তিন তরুণীর খাওয়া, থাকা সব বহন করেন তিনি। তরুণীদের জন্য খদ্দের সংগ্রহ করেন শিউলি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ফার্মগেট, সংসদ ভবন এলাকা সংলগ্ন ফুটপাতে দেখা যায় শিউলিকে। কখনও কখনও তার সঙ্গে থাকেন দুই একজন তরুণীও।
এমনকি ঢাকার বাইরে ধনাঢ্য পুরুষদের সঙ্গে বিভিন্ন ট্যুরেও পাঠান এই তরুণীদের। বিনিময়ে তরুণীদের নির্দিষ্ট কমিশন দেন। শিউলি বলেন, এটি একটা ব্যবসা। সেবা দিয়ে অর্থ উপার্জন। চাকরি করতে গেলেও মেয়েরা নিরাপদ থাকে না। এখানে জেনেবুঝেই মেয়েরা আসে। কাজ করে। টাকা উপার্জন করে। পরিবারের সদস্যদের মতোই তারা মিলেমিশে থাকেন।
তিনি জানান, তাদের খদ্দের মূলত চল্লিশ বছর উর্ধ্ব পুরুষরা। তরুণদের গার্লফ্রেন্ড থাকে। তারা চাইলেই গার্লফ্রেন্ডকে পায়। তাই খদ্দেরের তালিকায় তরুণদের সংখ্যা কম। তবে সব মিলিয়ে ব্যবসা ভাল না শিউলির। করোনা কারণে লোকজন আগের মতো যোগাযোগ করছে না। ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে ময়মনসিংহের এই নারী জানান, যে সন্তানের জন্য আশির দশকের শেষ দিকে এই পথে নেমেছিলেন, সেই ছেলেটি বড় হয়ে তাকে ছেড়ে বিয়ে করে অন্যত্র থাকে। তার খোঁজ নেয় না। শিউলি বলেন, জীবনকে এখন একটি অভিশাপ মনে হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-