ডেস্ক রিপোর্ট •
বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য আগামী দুই বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কিনা সে সম্পর্কে তিনি কোন কিছু বলেন নি। সর্বশেষ ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির এই রহস্যময় উত্তর আওয়ামী লীগের মধ্যে নতুন উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে।
সবকিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ অথবা আগামী বছরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সেই কাউন্সিলের শেখ হাসিনা আবার দলের সভাপতি থাকবেন কিনা সেটিও একটি প্রশ্ন। কারণ গতবারই আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন এটি শেষ। তিনি এখন নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান। তিনি অবসরে যেতে চান।
ইদানিং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তারা অবসর ভাবনার কথা বলেন। তিনি রাজনীতি এবং দল পরিচালনা থেকে নিষ্কৃতি চান। অবসরে সময় কাটাতে চান। ২০১৮ এর নির্বাচনের পর টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি আল জাজিরায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, এবারই তার শেষ প্রধানমন্ত্রীত্ব। আগামী বার তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হবেন না। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা মনে করতেন যে, এটি শেখ হাসিনার একটি অভিপ্রায়ের কথা। কিন্তু বাস্তবে এটি করতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিপুল বাধার সম্মুখীন হবেন।
এর আগেও শেখ হাসিনা একাধিকবার আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন কিন্তু সে সময় দলীয় নেতাকর্মীদের আবেগের কাছে তিনি পরাস্ত হয়েছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন যে শেখ হাসিনা যদি সত্যি সত্যিই তার কথায় অটল থাকেন তাহলে কী হবে? কে হবেন শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার? বাংলাদেশের এখন একটি অনিবার্য বাস্তবতার নাম হলো শেখ হাসিনা। সরকার পরিচালনার কেন্দ্রীয় দায়িত্বই শুধু নয়, প্রায় এক হাতে তিনি সরকার পরিচালনা করছেন। সব সংকটের সমাধান করতে হচ্ছে তাকে একাই।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, তার একটা বিরাট মন্ত্রিসভা আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের আস্থা এবং ভরসার জায়গা একটি, সেটি হলো শেখ হাসিনা। কাজেই শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার আদৌ কাজ করতে পারবে কিনা এ নিয়ে জনমনে যেমন শঙ্কা রয়েছে তেমনি আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে উৎকণ্ঠা। সরকারের যেমন শেখ হাসিনা একক হাতেই সবকিছু সামলাচ্ছেন। তার নিজস্ব বিচক্ষণতায় কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তার দূরদর্শিতার মাধ্যমে অনেকগুলো সংকট থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটছে, ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগও শেখ হাসিনা নির্ভর হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া দলের তৃণমূলের কর্মীদের কাছে আস্থাশীল নেতার সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। দলের সব সিদ্ধান্তের জন্য নেতাকর্মীরা তাকিয়ে থাকেন শেখ হাসিনার ওপর।
শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নিজেকে এমন এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যেখানে তিনি দলের সবার চেয়ে অনেক উঁচুতে চলে গেছেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই স্বীকার করেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শুধুমাত্র শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প এখনো হয়নি। কিন্তু বয়স মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের একটি বড় বাধা। শেখ হাসিনারও বয়স হয়েছে এবং তিনি আর কতদিন রাজনীতি করতে পারবেন সেটিও এখন একটি মৌলিক প্রশ্ন হয়ে এসেছে আওয়ামী লীগের জন্য।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন যে, শেখ হাসিনা যেভাবে দল এবং জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন সেরকম আস্থাশীল একজনকে এখনই তখনই তৈরি করতে না পারলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে এক ধরনের নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগতে হবে। আবার আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন যে শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে তার বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করলে সেটি নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। শেখ হাসিনার বিকল্প যেমন নেই তেমনি এটাও এখন এক বাস্তবতা যে আওয়ামী লীগকে এখনই শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার নির্বাচন করতে হবে এবং যিনি আস্তে আস্তে দল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা অর্জন করবেন এবং যিনি জনগণের কাছে সম্ভাবনাময় নেতৃত্তের পূর্বাভাস দিবেন।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগ যদি এখনই শেখ হাসিনার পরবর্তী নেতৃত্বের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে পরে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ এক ধরনের নেতৃত্বশূন্যতার মধ্যে পড়তে পারে। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন শেখ হাসিনা এখনও যথেষ্ট ক্রিয়াশীল এবং এখনই উত্তরাধিকার নির্বাচনের সময় নয়। তারা মনে করেন যে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা যদি রাজনীতি থেকে শেষ পর্যন্ত অবসর নেন তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই সিদ্ধান্ত নেবেন পরবর্তী নেতৃত্ব কার হাতে যাবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-