মানুষকে বোঝাতে হবে যে, গতবারের করোনাভাইরাস (চীন ভ্যারিয়েন্ট) আর এবারেরটা (আফ্রিকা ও ব্রিটেন ভ্যারিয়েন্ট) এক নয়। গত বছরের ভাইরাসের গতিবিধি, আর আজকের করোনাভাইরাসের গতিবিধি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটাকে আটকানো বেশ জটিল। কারণ এটা এন্টিবডিকে বাইপাস বা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে অতিক্রম করা শিখে গেছে। এটি প্রতিনিয়ত মিউটেশন পরিবর্তন করে। যখনই বাধাগ্রস্ত হয়, তখন চেঞ্জ করে। মানে যত বেশি এন্টিবডি আসবে, তত বেশি চেঞ্জ করবে। এন্টিবডির প্রতিরোধে বেশিরভাগ ভাইরাস মারা যাবে, কিন্তু যে দু-একটা বেঁচে থাকবে তারা রূপ পরিবর্তন করবে এবং ছড়িয়ে পড়বে।
আমি বড় বিজ্ঞানী না। কিন্তু এটা আমি বলতে পারি, এ ভাইরাসের গতিবিধি লক্ষ্য রাখা খুবই কঠিন। সে বারবার চেঞ্জ করবে তার ক্যারেক্টার (চরিত্র)। যখনই সে বাধা পাবে, তখনই সে তার রূপ চেঞ্জ করবে।
সোমবার (২৯ মার্চ) জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীব বিজ্ঞানী, সার্স ভাইরাসের কিট উদ্ভাবক ও করোনাভাইরাস শনাক্তের ‘জি র্যাপিড ডট ব্লট’ কিট উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীল এসব কথা বলেন। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধি পরিস্থিতিতে এ আলাপের আয়োজন করা হয়। তার বক্তব্য, এই করোনা প্রতিরোধে মাস্কের বিকল্প নেই। সরকারকে মাস্ক রেশনিংয়ের মাধ্যমে দেয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে টিকা ও মানুষের আচরণ পরিবর্তন জরুরি। জাগো নিউজের আলোচনায় ড. বিজন কুমার শীল আরও যেসব কথা বলেছেন, তা তুলে ধরা হলো-
মুক্তির উপায়…
বাংলাদেশে যে মিউটেশন হচ্ছে, একবার হয়েছে আবার যে হবে না বা হচ্ছে যে না, তা বলা যাবে না। বারবার মিউটেশন হবে। কারণ একবার সে ইমিউন সিস্টেমকে ভেঙেছে, সুতরাং সামনে আবার যখন ডিফেন্স সিস্টেম থাকবে তখনই ভাঙবে। এভাবে চলতে থাকতে পারে।
এর থেকে মুক্তির উপায় এই মুহূর্তে বলা খুব জটিল। করোনা থেকে মুক্তির ইতিবাচক কোনো উত্তর এই মুহূর্তে আমার কাছে নাই। ভাইরাস নিয়ে আমি কাজ করেছি। পিএইচডি করেছি। আমি জানি এর চেহারা কী হতে পারে। ভাইরাস জীবন্ত কোষ ছাড়া বাঁচে না। সুতরাং তাকে যদি জীবন্ত কোষের বাইরে রাখা যায়, তাহলে মারা যাবে। তাই তাদের হোমলেস (গৃহহীন) করতে হবে। হোমলেস করার এখন একটাই পথ– করোনা হোক বা না হোক, টিকা দিক বা না দিক, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।
সরকারকে মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে। চার-পাঁচ দিন আগে একটা ফাইন্ডিংস বেরিয়েছে যে, সুতির মাস্ক সব থেকে ভালো। মুখ থেকে আর্দ্রতা বের হচ্ছে। সেটা সুতির মাস্কের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যেসব ছিদ্র তা ব্লক করে দেয়। ভাইরাস তখন ঢুকতে পারে না। বাজারে যে মাস্ক পাওয়া যায়, তা মুখের সেই আর্দ্রতা শুরুতে গ্রহণ করে না। এ জন্য বলা হয়েছে যে, সুতির মাস্ক সব থেকে ভালো।
রেশনিংয়ের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে মাস্ক দেয়া হোক। মাস্ক প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে দু’টি করে দেয়া হোক। তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও বলতে পারবে যে, আপনাকে মাস্ক দেয়া হয়েছে তাহলে কেন আপনি মাস্ক পরলেন না। মাস্ক পরতে আইন করতে হবে। মাস্ক না পরলে শাস্তি হবে। সিঙ্গাপুরে মাস্ক না পরলে ৫০০ ডলার জরিমানা। সিঙ্গাপুরে মাস্ক রেশনিং দেয়া হয়। আমরা মাস্ক পাই সরকারের কাছ থেকে। এক মাস পর পর দেয়।
মাস্ক পরার বিষয়টা আইনত তো বটেই, ব্যক্তিগতভাবে বুঝতে হবে যে, মাস্ক না পরলে আপনি আক্রান্ত হবেন, আপনার পরিবার আক্রান্ত হবে, পরিবারের সদস্যকে হারাবেন।
গত বছর মার্চ মাসে গণস্বাস্থ্যের নারী কেন্দ্রে তিন লেয়ারের মাস্ক ডিজাইন করে দিয়েছিলাম। সেখানকার একটা সুতির মাস্ক আমি সিঙ্গাপুরে নিয়ে এসেছি। সেটা ছয় মাস ধরে পরছি। আজও ভালো আছে। সেটা আমরা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বানিয়েছিলাম। সেটা আমি প্রতিদিনই ধুই। রঙ পরিবর্তন হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও ঠিক আছে। এটাতে নিশ্বাস নেয়া যায়। কারণ সুতিতে নিশ্বাস নেয়া যত সহজ, বাজারের মাস্কে তত সহজ নয়।
যেভাবে করোনা ভয়াবহ মিউটেশন হলো
করোনা শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অন্য জায়গায়ও বেড়ে গেছে। ব্রাজিলে তো ভয়ানক অবস্থা। একদিনে এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাড়া শুরু করেছে, একদিনে ৭২ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। ব্রিটেনে কমেছে। জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ডে বেড়েছে। ভারতেও বেড়েছে। গতকাল ভরতে ৬২ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে তো একেবারে কমে গেছিল, ২ শতাংশে নেমে এসেছিল। ২ শতাংশ থেকে যদি আবার বাড়ে, তাহলে দু’টি কারণ থাকতে পারে। একটা হলো দেশে নতুন মানুষ প্রবেশ করেছে, যাদের মধ্যে এন্টিবডি নেই। অথবা নতুন ভাইরাস ঢুকছে। বাংলাদেশে নতুন মানুষ তো ঢুকেনি, যা আছে তাই। যেটা ঢুকেছে সেটা হলো ভাইরাস। আইসিডিডিআরবি জানুয়ারিতে জানিয়েছে যে, বাংলাদেশে ব্রিটিশ ট্রেন্ড বি১১৭ পাওয়া গেছে। আফ্রিকান (এটাও পাওয়া গেছে দেশে) ও ব্রাজিলেরটা পাওয়া গেছে কি না, জানি না।
আমি বাংলাদেশ থেকে সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুরে আসলাম। ওই সময় ব্রিটিশ চিফ মেডিকেল অফিসার ও এডভাইজার বিবিসিতে একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তখন তারা বলছিলেন, এই মুহূর্তে যদি লকডাউন না দেয়া হয় বা কন্ট্রোল না করা হয়, তাহলে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। সরকার তো ইচ্ছা করলেই বন্ধ করতে পারে না, তাদের লকডাউন দিতে একটু দেরি হয়েছে। যখন লকডাউন হলো তখন প্রতিদিন ৬৯ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার একটা ভালো কাজ করেছিল। তারা বিশ্বে প্রথম ভ্যাকসিন ব্যবহার করল। এফডিএ’র অনুমোদনের আগেই তারা ফাইজারের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করল। এরপর মর্ডানা ও অ্যাট্রাজেনেকা দেয় তারা। এই ব্যাপক টিকা, লকডাউন, মাস্ক পরা– এসব কারণে ব্রিটেনে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন ৬৯ হাজার থেকে নেমে এখন বোধহয় ৫ হাজারে এসেছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশে জার্মানি, পোল্যান্ড, ফ্র্যান্স, যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভাইরাসটি যদি ছড়িয়ে থাকে, তারপর সিরিয়াস ভাইরাস আসেনি। উহানের ভাইরাসই ছড়িয়েছে, মানুষকে আক্রান্ত করেছে। যেসব মিউটেশন হয়েছে, সেগুলো তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনার সঙ্গে কথা বলার আগে আমার থিসিসটা পড়লাম। সেখানকার একটা অধ্যায় ছিল, যেখানে বলা হয়েছে, ভাইরাস যখন একটা নিউট্রিলাইজিং এন্টিবডির বিরুদ্ধে গ্রো করে, সেই ভাইরাস যদি গ্রো করতে পারে তাহলে তার পরিবর্তন হয় এবং সেই পরিবর্তন খুব মারাত্মক পরিবর্তন। এন্টিবডির মুখে ৯৫ শতাংশ ভাইরাস বিলীন হয়ে যায়, কোনো কারণে ১ থেকে ২ শতাংশ অনেক শক্তিশালী হয়। এটাই সবচেয়ে ক্ষতিকারক।
এটা (ক্ষতিকর ভাইরাস) কীভাবে হলো? এটা হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, যাদের রোগ আছে, যেমন এইচআইভি। আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ইংল্যান্ডে এটা বেশি হয়েছে, কারণ এখানে এইচআইভি আছে। তাদের শরীরে যখন ভাইরাসটা ঢুকে, যার শরীরে রোগ নাই আর যার রোগ আছে, যার রোগ নাই তিনি সংক্রমিত হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে এন্টিবডি চলে আসবে। কিন্তু ইমিউন কমপ্রোমাইজ, তাদের মধ্যে এন্টিবডি কম আছে। ভাইরাস একটু নামে আবার উঠে। এই যে নেমে আবার উঠলো, এই উঠাটাই হচ্ছে ভাইরাস মিউটেশন।
করোনা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, বলা দুষ্কর
করোনাভাইরাসের মূল জিনিসটা হচ্ছে তার স্পাইক। মানে ভাইরাসটা যে দু’টি হাত দিয়ে ঢুকে জিনের ভেতরে, ওইখানে তার স্ট্রাকচার চেঞ্জ করে ফেলে। চেঞ্জ করে তার বন্ডিংটা আগের চেয়ে আরও টাইট হচ্ছে। হওয়ার জন্য সে কিন্তু সেলের ভেতরে ঢুকছে। এন্টিবডি বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকা অবস্থায় যে ভাইরাসটা ওখান থেকে স্কিপ করে আসলো…। মনে করেন, একশ জন দৌড়াচ্ছে রাস্তায়। দৌড়াতে দৌড়াতে তারা এক জায়গায় দেখল যে, কাঁটাতারের বেড়া। বেশিরভাগ লোক কাঁটাতারে আটকে যাবে, কিন্তু যে লোকটা হাই জাম্প দিতে পারে, সে বেড়া টপকে চলে আসবে। যে টপকে চলে আসলো সে কিন্তু পরবর্তী ব্যারিকেড আর ভয় পাবে না, জাম্প দিতেই থাকবে। এরকম ভাইরাস যখন মানুষের শরীরে ঢুকে, যখন সে। অক্সফোর্ডে এক ভদ্রলোক একটা পেপার উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এক রোগী দেখেছিলেন ৩০ দিন পরপর ভাইরাস কমে, আবার বাড়তে থাকে। একশ দিন পর সেই ভদ্রলোক মারা গেছে। এটাই হচ্ছে ভাইরাসটা এন্টিবডিকে বাইপাস করেছে।
এই ভাইরাসগুলো যখন ছড়াবে। গত এক বছরে বাংলাদেশের অনেকের এন্টিবডি আসছে। ব্রিটেনে ছিল ৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৯ শতাংশ, সুইডেনে ৫ শতাংশ, ভারতে ছিল ৪৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ৫০ শতাংশের মতো এন্টিবডি আছে। এই যে গ্রুপ অব পিপল যাদের মধ্যে এন্টিবডি আছে, এর মধ্যে যদি ভাইরাসটা টিকে থাকতে পারে, তাহলে কিন্তু চিন্তার বিষয় আছে। গত বছর আমি বলেছিলাম যে, করোনা নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যে কমে যাবে এবং তাই হয়েছে। ওই সময় আমার সমীকরণ করা সহজ ছিল। কারণ ভাইরাস একটা সাইক্লোনের মতো এসে ধীরে ধীরে কমে গেছে। কিন্তু এখন যে ভাইরাস বাংলাদেশে এসেছে বা অন্য দেশে হচ্ছে, এই ভাইরাসটা এই প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার মতো শক্তি সঞ্চয় করেছে। এই শক্তি সঞ্চয় করায় তার গতিপথ সরল নয়, বাঁকা হয়ে গেছে। সে প্রতিরোধ পেলেই তা অতিক্রম করতে পারবে। যার জন্য এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলা খুব দুষ্কর।
টিকার দেয়ার পরও মাস্ক পরতে হবে
টিকা দিলে কী হবে না দিলে কী হবে? একজন করোনা থেকে মুক্ত হয়েছে, আরেকজনের করোনার দু’টি ডোজ দেয়া হয়েছে, আরেকজনের ভ্যাকসিন দেয়া চলছে এবং আর কিছু লোককে টিকা দেয়া হবে– এই চারটি গ্রুপের মধ্যে ভাইরাসটা কীভাবে কাজ করবে? যারা একবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা টিকার চেয়ে অনেক বেশি। কেউ যখন করোনা থেকে সেরে উঠেন, তখন তার মধ্যে যে পরিমাণ এন্টিবডি তৈরি হলো, সেই সঙ্গে যে মেমোরি সেল তৈরি হবে, সেটা শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের পাশে থাকে। একজন মানুষের প্রতিরোধী যেসব সেল আছে তার ৭০ শতাংশ থাকে এখানে। কারণ এসব জায়গায়ই বেশিরভাগ সংক্রমণ হয়। মেমোরিসেলগুলো ওখানেই বসে থাকে, কারণ তারা জানে ভাইরাস এই দিক দিয়েই ঢুকবে। টিকা দিলে মেমোরিসেল থাকে বগলের কাছে। কিন্তু এন্টিবডি সারা শরীরে থাকবে। এ জন্য করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির ডিফেন্স সিস্টেম টিকা দেয়া ব্যক্তির চেয়ে অনেকগুণ বেশি।
টিকা দেন আর না দেন, করোনায় আক্রান্ত হন আর না হন, নাক দিয়ে ভাইরাস ঢুকলে তা বেড়ে উঠবেই। ভাইরাস যখন মুভ করে রক্তে প্রবেশ করবে, তখন সে প্রতিরোধের মুখে পড়বে। করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের এন্টিবডি দ্রুত গড়ে উঠবে, যারা টিকা দিয়েছেন তাদের এন্টিবডি হতে দেরি লাগবে। এই সময়ে ভাইরাস যখন নাকে বেড়ে উঠবে, তখন হাঁচি দিলে সে করোনা ছড়াবে। এজন্য ভ্যাকসিন দেয়ার পরও মাস্ক পরা উচিত। নিজের নিরাপত্তাসহ অন্যের জনও মাস্ক পরা উচিত।
ভাইরাসের পরিবর্তন লক্ষ্য করছে কে?
এই ভাইরাসটা খুবই চিন্তার বিষয়। ডিসেম্বরে আমি বলেছিলাম, এই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ সরকার ও মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট, আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, ব্রাজিলের ভ্যারিয়েন্ট চিন্তার কারণ। প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে দু’টি স্টেইন (ব্রিটিশ ও আফ্রিকান) এসেছে, সেগুলো কি বসে আছে? এটা কী পরিবর্তন হচ্ছে না? এই পরিবর্তন কে দেখছে? প্রায় চার মাস হলো ভাইরাসটা এসেছে, এর মধ্যে কী এর পরিবর্তন হয়নি? পরিবর্তন হয়ে সেটা হয়তো নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে, নাহলে সেটা আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে। এখানে পরিবর্তন হওয়া খুব স্বাভাবিক। কারণ এখানে পরিবর্তন হওয়ার মতো পরিবেশ আছে। পরিবর্তন হয়ে ভাইরাস বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে। অধিকাংশই মরবে, যে বাঁচবে সে কিন্তু কাল হয়ে দাঁড়াবে।
করোনার অবনতিতে মানুষের ব্যবহার দায়ী
করোনাভাইরাসের আজকের যে অবস্থা তার জন্য ভাইরাস নয়, মানুষের ব্যবহার দায়ী। ইউরোপের ম্যাপ দেখলে বোঝা যাবে, গত বছরের জুন-জুলাইয়ে করোনা একদম নিচে নেমে গিয়েছিল। এরপর মানুষ মাস্ক খুলে উল্লাস করল। আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজারে যেমন হয়েছিল। সেখানে লাখ লাখ মানুষ গিয়েছিল। অনেকে হোটেল না পেয়ে গাড়িতে থেকেছে। অনেকে বিচে ঘুমিয়েছে। এটাও জানা গেছে যে, এবার অধিকাংশ সংক্রমণ কক্সবাজার থেকে হয়েছে। আজকে করোনাভাইরাসের যে ঢেউ বয়ে যাচ্ছে, তার জন্য ভাইরাস নয় মানুষ দায়ী।
নিজকে পরিবর্তন করে ভাইরাস বাঁচার চেষ্টা করবে। সুতরাং একে হোমলেস (গৃহহীন) করতে হবে। তারা গৃহ ছাড়া বাঁচে না। তাদের গৃহ হচ্ছে মানুষের শরীর। সুতরাং একে যদি শরীরে ঢুকতে না দেয়া হয়, তাহলে সে বেঁচে থাকতে পারবে না। শরীরে ঢুকতে না দেয়ার উপায় হলো মাস্ক পরা ও টিকা দেয়া।
ইয়ার অব মাস্ক
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী থেকে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত -২৮০টি দিন কষ্ট করে সবাই মাস্ক পরুন। তাহলে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে এই বছরটাকে আমি ইয়ার অব মাস্ক ঘোষণা করার কথা বারবার বলেছিলাম। সবাই মাস্ক পরুক। আমার কথা তো কেউ শুনে না।
পর্যটন শতভাগ বন্ধ করতে হবে
যতগুলো পর্যটন কেন্দ্র আছে, সেগুলো শতভাগ সিল (বন্ধ) করে দেয়া উচিত। কেউ যেন যেতে না পারে। বিশ্ববিদ্যালয় খুলেনি এটা ভালো কাজ হয়েছে।
ভাইরাসটাকে সহজভাবে নেয়ার কোনো অবকাশ নেই। তা নাহলে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ব্রাজিলে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকায় আবার হচ্ছে, ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ব্রিটেনের স্টাইলটাকে ফলো করা হোক। তারা এটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-