মোঃ কামাল উদ্দিন, চকরিয়া •
চকরিয়ায় স্বামীর দেনা পরিশোধে সুদের মাশুল গুণতে গিয়ে স্বামীর নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ তিন সন্তানের জননী তসলিমা আক্তার(৩৩) নিজেকে শেষ করতে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিলেন।
সম্প্রতি এ গৃহবধুর ঘরের এক কন্যাসন্তানের বিয়ে হয়েছে। তবে বাকী ৫ ও ৮ বছরের ২ শিশু। মা হারানোর বেদনায় মূহুর্তেই যেন ঘটনাস্থলের চারিদিকের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। কারোর সান্তনায় যেন থামছিলো না শিশু দুটির কান্না।
সোমবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাত (পবিত্র শবে বরাতের রাতে) সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা ৫নং ওয়ার্ডের উত্তর কাহারিয়াঘোনা খন্দকার পাড়ায় ঘটেছে এ ঘটনা। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে।
স্থানীয় ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের বহদ্দারকাটা গ্রামের মোঃ সেলিম উদ্দিন। বিগত ৩বছর পূর্বে স্ত্রীর পিতৃালয়ের পাশে কাহারিয়াঘোনায় সুদের উপর টাকা ঋণ নিয়ে ১০ কড়া জমি ক্রয় করে বসতী গড়ে তুলে সেলিম। সংসারে রয়েছে ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। নানা অভাব অনটনসহ প্রায় ২ লাখের অধিক ঋণের টাকায় সুদ এসেছে অনেক গুণ।
বার বার মহাজনি নিয়মে মূল টাকার অধিক সুদের টাকা পরিশোধ করে আসলেও আসল টাকার সাথে গাণিতিক হারে বৃদ্ধি হতে থাকে সুদ।
সম্প্রতি কিস্তিতে নেয়া স্বামীর চালিত ট্রলি গাড়ীটিও আটকে রাখে মৌলভীরকুম বাজার এলাকার পাওনাদার। ঘটনাটি স্থানীয় মিজানুর রহমান কন্ট্রাকটার জানার পর স্বামী সেলিমকে মোবাইল ফোনে বলেন, তুমি বউয়ের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করিও না। তোমার ট্রলিগাড়ি আটকানো ও তোমরা নিজেদের বিষয়ে সামাজিকভাবে এশার নামাজের পর মিমাংসা করা হবে। তাতেও কান দেয়নি সেলিম। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী ঘরে এসে স্ত্রীর সাথে আবোলতাবোল বাকবিতন্ডায় আসরের নামাজের পরে স্ত্রীকে একদফা মারধর করে। ফের এশার নামাজের আগ মূহুর্তে দ্বিতীয় দফা মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা মেরে দেয়।
সূত্র জানায়, এসময় সেলিম মসজিদে চলে গেলে , গৃহবধু তসলিমা ঘরের দরজার সামনে বারান্দায় চালের তীরের সাথে মশারী বেধে গলায় পেছিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।
ঘটনার খবর পেয়ে থানার উপপরিদর্শক মোশারফ হোসেনেরে নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে রাত ১টার দিকে লাশ থানায় নিয়ে আসে।
জানা যায়, বিভিন্ন সময় পাওনাদারেরা বাড়িতে এসে স্বামীর অনুপস্থিতিতে তসলিমাকে মানুষিকভাবে হেনস্তা করে আসছিলো। পাওনাদার আসার খবর পেলেই সেলিম অন্যত্র সরে যেতো। এ নিয়ে ৩-৪ মাস আগেও স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ফোরকানুল ইসলাম তিতুর বাড়িতে স্বামী স্ত্রীর গরমিল ও পাওনাদারদের টাকা পরিশোধে স্বামীর অবহেলার কারণে তাকে চাপ দেওয়া হয়।
ঋণ নেয়া সুদি মহাজনদের মধ্যে রয়েছে পৌরসভার বাটাখালীর রুজিনা, খোন্দকানপাড়ার বাচু বেগম, তার বোন মরিয়ম, মনির আহমদ ও ব্র্যাকসহ বিভিন্ন সংস্থা।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, নিহত গৃহবধূ সেলিনা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-