কক্সবাজার চেম্বারের নাম ভাঙ্গিয়ে জাল সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক •

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ সনদ বাণিজ্য করছে কুচক্রী মহল। এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বদনাম হচ্ছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের ব্যবসায়ী ও সুধীজন বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নাম ভাঙ্গিয়ে জালিয়াতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী (খোকা)।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনিভাবে চেম্বারের নামে জাল সনদ বানিয়ে অর্থ-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গেজেট মতে, কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির অফিস ঠিকানা কক্সবাজার শহরের পূর্ব বাজারঘাটার আবুসেন্টার। এর বাইরে কেউ কোন ঠিকানা ব্যবহার করলে সম্পূর্ণ বেআইনি।

সম্প্রতি জনৈক মোহাম্মদ আলীকে চেম্বার সভাপতি উল্লেখ করে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে বিভ্রান্তিকর দাবি করে আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা উপেক্ষা করে জনৈক মোহাম্মদ আলী তার পরিবারের সদস্য এবং কিছু লোকজন সাথে নিয়ে আলী আর্কেড ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি বেসরকারি এবং এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন জায়গায় কমিটির তালিকা প্রেরণ করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।

অপচেষ্টায় লিপ্ত স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী।

সাংবাদিকদের জ্ঞাতার্থে চেম্বার পরিচালক আবেদ হাসান সাগর বলেন, কক্সবাজারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতার পাশাপাশি সরকারকে সহযোগিতা লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও এবং অতিরিক্ত সচিব আবদুল মান্নান (বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব), দুইজন উপসচিব, কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, তখনকার পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরমেয়র মুজিবুর রহমানরসহ জেলার অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে সার্বিক বিবেচনা ও তদন্ত করে পূর্ব বাজার ঘাটা, প্রধান সড়ক, আবু সেন্টার ঠিকানায় পরিচালিত চেম্বারকে বৈধতা দিয়ে একটি ২১ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। সেই ঠিকানায় চেম্বারের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, যিনি বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছেন সেই মোহাম্মদ আলীও চেম্বারের পরিচালনা পরিষদ গঠনের সময় (১৫ জুলাই ২০১৭ ইং) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন এবং সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব বাজার ঘাটা, আবু সেন্টার চেম্বার অফ কমার্স অফিস ব্যতীত আলী আর্কেডসহ কোন প্রতিষ্ঠানে চেম্বারের নামে সাইনবোর্ড থাকলে তা অপসারণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে দিকনির্দেশনা জারি করা হয়।

অপরদিকে চেম্বারের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য উভয় পক্ষের সদস্যদের নিয়ে ২১ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮-২০২০ অর্থ বছরের জন্য বানিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত কমিটি অদ্যাবধি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় অকার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যার মেয়াদকাল মন্ত্রণালয় থেকে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর জারিকৃত সার্কুলারে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত বর্ধিত আছে।

চেম্বার পরিচালক ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুল খালেক বলেন, স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী এই চক্র মোহাম্মদ আলী গং ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না বলে বিগত এক দশকে তাদের কোন কর্মকাণ্ড জেলাবাসী দেখেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত পরিবারের সদস্য জেলা বিএনপি বড় মাপের নেতার ক্ষমতা প্রদর্শন করে পরিবারতন্ত্রে লিপ্ত।

মোহাম্মদ আলীর তথাকথিত সচিব নুরুল কবির, জনৈক সানাউল্লাহ, আবু জাফর ও ছেলে মোরশেদ মোহাম্মদ আলীসহ কিছু অসাধু লোক নিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিরীহ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এখনো সার্টিফিকেট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে এবিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য তিনি আহবান জানান আবদুল খালেক।

তিনি সঠিক তথ্য তুলে ধরে জাতির নিকট বিষয়টি স্পষ্ট করার অনুরোধ করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আলী আর্কেডে ঝুলানো সাইনবোর্ড অপসারণে মোবাইল কোর্টের দাবি তুলেন চেম্বারের সদস্য উদয় শংকর পাল মিঠু।

জেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, মোহাম্মদ আলী, তার সচিব নুরুল কবিরসহ সংশ্লিষ্টদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য প্রচলিত আইনে আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

আরও খবর