অনলাইন ডেস্ক •
নামেই তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এ পুঁজি ব্যবহার করে গত দশ বছরে তিনি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সুদের ব্যবসা দিয়ে শুরু, এরপর কি করেননি তিনি। নানা ধরনের প্রতারণা, নদী দখল করে সেখান থেকে বালু উত্তোলন,সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি এবং বেসরকারি মালিকানার জমি দখলসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার গাঁড়দাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যে বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবনা আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান ইতিমধ্যে বিষয়টি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জানিয়েছেন। দুদকের অভিযোগপত্রে দেখা যায়, গাঁড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মক্তবে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পুরোদস্তুর মাদক ব্যবসায়ী বনে যান। এতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে তার উঠাবসা শুরু হয়।
প্রভাবশালীরাই তাকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বানিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে থাকেন। চেয়ারম্যান হবার পর সাইফুল ইসলাম এলাকায় প্রতিরাতে জুয়ার আসর বসিয়ে বিপুল অর্থ ভাগিয়ে নেন। এছাড়া মাদক ব্যবসা, সুদের ব্যবসা, নানান ধরনের ঠিকাদারি, ভূমি দখলের মতো কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িয়ে পড়েন। তাঁর দৃশ্যমান বিভিন্ন ব্যবসায় শত শত কোটির মালিকানা মিললেও আয়কর বিবরণীতে তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন:
দুর্নীতি করে সৃষ্টিকর্তার কাছে কি জবাব দেবেন
দুদকে পাওয়া অভিযোগপত্রে দেখা যায়, সাইফুল ইসলাম মাদক ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত। ২০১৮ সালে তাঁর গ্রাম মশিপুর মাদকের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান অর্জন করে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্প একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে তিনি প্রতিঘর প্রতি ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এছাড়া তিনি করতোয়া নদীর তালগাছি, নরিনা এবং গাড়াদহ প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও সাইফুল ইসলাম আবারো তার অপকর্ম বজায় রাখেন।
দুদকের অভিযোগপত্রে সাইফুল ইসলামের সম্পদের বিশদ বিবরণ দেয়া হয়। এতে বলা হয়, উত্তরবঙ্গের নামকরা গরুর হাট তালগাছিতে বাজারের জায়গা দখল করে তিনি মার্কেট বানিয়েছেন। এর ফলে হাটটি একেবারে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। মনিপুর এবং পুরাণ টেপরিতে তাঁর নিজের নামে চারটি ইটভাটা রয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলেও তার নামে রয়েছে একাধিক ইটের ভাটা। সাইফুল ইসলাম পরিবহন ঠিকাদারি ব্যবসার সাথেও জড়িত। নামে বেনামে তার অন্তত: ৪০টি ট্রাক রয়েছে।
বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টেও তার বেনামে বিনিয়োগ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর দুইপ্রান্তে তাঁর নামে জমি রয়েছে। এছাড়া তিনি নিজ ইউনিয়নে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল হাইওয়েতে ফুট ভিলেজের পাশে তার কয়েক কোটি টাকা দামের জমি রয়েছে। এছাড়া তিনি একটি চট মিলের মালিক বলে জানা গেছে।
এসব বিষয় নিয়ে সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বলতে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নানা ধরনের ঝামেলার কারণে তিনি পলাতক রয়েছেন। দুদকের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, সাইফুল ইসলামের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে। শিগগিরই তদন্ত শেষ করে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-