ডেস্ক রিপোর্ট •
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৬৬ জনের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন দিন ধরে নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা এক হাজারের বেশি। আর টানা চার দিন ধরে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের ওপরে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এ নিয়ে দেশে করোনায় আট হাজার ৫১৫ জনের মৃত্যু হলো।
২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ একজন মারা যান। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে। দুই মাস সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর নভেম্বরের শুরুর দিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। ডিসেম্বর থেকে তা আবার কমতে থাকে।
১৮ জানুয়ারির পর থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে ছিল। গত মঙ্গলবার তা বেড়ে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশে ওঠে। এরপর থেকে তা বাড়ছে। বুধবার শনাক্তের হার আরও বেড়ে হয় ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং শুক্রবার শনাক্তের হার বেড়ে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশে পৌঁছাল।
সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি এক দিনে এক হাজার ৭১ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। দুই মাস পর গত বুধবার তা আবার হাজার ছাড়ায়।
এ ঘটনাকে দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। অনেক দেশে প্রথম দফার তুলনায় পরের বার সংক্রমণ বেশি হয়েছে। বাংলাদেশে ৫ শতাংশের নিচে নামার পর সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। এটি দ্বিতীয় সংক্রমণের শুরু হতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত বুমেরাং হতে পারে’ :বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ সমকালকে বলেন, কোনো কোনো দেশে দ্বিতীয় সংক্রমণ প্রথম দফার তুলনায় মারাত্মক ছিল। এ ছাড়া এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরন বাংলাদেশেও এসেছে। এটি নতুন করে আতঙ্কের খবর। একই সঙ্গে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এখন সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
ডা. আব্দুল্লাহ আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রায় সব দেশের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই এমনটি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকার কয়েকটি দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুও করা হয়েছিল। কিন্তু্তু দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর সংক্রমণ আবার বেড়েছে। পরে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। সুতরাং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার আগে সরকারকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে না চললে, মাস্ক ব্যবহার না করলে এবং হাত মুখে ও চোখে দেওয়ার আগে সাবান দিয়ে ধুয়ে না নিয়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়- এটি এখন সবাই জানেন। কিন্তু মানুষ এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসীন। টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এমনকি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলছেন না। এতে করে সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। তবে টানা ১৫ দিন ধরে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকলে বলা যাবে, নতুন করে আবারও সংক্রমণ শুরু হয়েছে।
তিনিও মনে করেন, সংক্রমণের ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সঠিক কাজ হবে না। তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
দেশের চিত্র :স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৯টি পরীক্ষাগারে ১৫ হাজার ৭৮২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের দিনের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ১১১টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪২ লাখ ৩২ হাজার ১৩৯টি।
দেশে এখন করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ২২২ জন। এর বিপরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ২৫২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে মোট পাঁচ লাখ ৯ হাজার ১৭২ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-