চকরিয়ায় পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিনের অবৈধ কারখানা!

মোঃ কামাল উদ্দিন, চকরিয়া •

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধন-২০০২) এর আইনে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত ও স্থায়ীভাবে নির্মিত পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিন কারখানার সন্ধ্যান মিলেছে।

কারখানার নাম নিউ কর্ণফুলি পলি ইন্ডাস্ট্রিজ চকরিয়া। সাইনবোর্ডে লেখা হয় লবণের পলিথিন, পি.পি ব্যাগ, পানির পাইপ প্রস্তুতকারক এবং এসব পলিথিনের প্রধান পরিবেশক হিসেবে খোঁজ মিলেছে চিরিংগা সোসাইটি মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় হাবিব এন্ড ব্রাদার্স এর। যা চকরিয়া পৌর শহরের চকরিয়া শপিং কমপ্লেক্স, বাবুল শপিং সেন্টার, আল রহমত শপিং কমপ্লেক্স, হক সুপার মার্কেট ও কাঁচা বাজারের আশপাশের অন্তত কয়েক ডজন রকমারি দোকানে এসব পলিথিন সাপ্লাই দিয়ে দেদারসে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে সরেজমিন দেখা যায়, বায়তুশ শরফ রোডের রাস্তার মাথায় বেশ কিছু ভাসমান পলিথিন বিক্রির দোকান দেখা গেছে। তারা বলছে এসব পলিথিন লবণ মাটে ব্যবহার হয়। তবে, ভাসমান এসব দোকানগুলোতে নিষিদ্ধ ঘোষিত প্লাস্টিকের বস্তা সহ বান্ডিল আকারে পলি ব্যাগে ব্যবহৃত পলিথিনের দেখা মিলেছে। উপরোক্ত মার্কেটের রকমারি ও বিভিন্ন ষ্টোর জাতীয় দোকান ছাড়া ও বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের দোকানে ও এসব পলিথিনের খোঁজ মিলে। কয়েক বছর আগে ও বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত অসংখ্য পলি ব্যাগ ও পাতলা পলিথিন জব্দ করে।

গত কয়েক বছর ধরে চকরিয়া পৌর শহর ছাড়া ও উপজেলার প্রায় ইউনিয়নে এসব পলিথিনে সয়লাব। পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লার সাথে পলিথিন সরাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। এসব পলিথিনের কারণে পৌর শহরে পানি চলাচলের ড্রেন গুলো ও জ্যাম হয়ে আছে।

সরেজমিনে হাবিব এন্ড ব্রাদার্সে পরিদর্শনে গেলে সেখানে অসংখ্য পলি ব্যাগ সহ বিভিন্ন জাতের পলিথিন এখানে শোভা পাচ্ছে। জানতে চাইলে দোকানের মালিক মাওলানা আরিফ উল্লাহ্’র ছোট ভাই হাবিব খান জানান, তারা সরকারিভাবে লাইসেন্স ও বিএসটিআই অনুমোদন নিয়ে কারখানা ও শোরুম খুলে ব্যবসা করছেন। এই দুই প্রতিষ্টানের মালিক মাওলানা আরিফ উল্লাহ্।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এ কারখানার সন্ধ্যান। এটি চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাস্তার মাথা- মহাসড়ক ও স্থানীয় রশিদ মিয়ার বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত।

সরেজমিন দেখা যায়, বিশাল আকারের জমি বেষ্টিত কারখানাটির চারপাশে বাউন্ডারি দেয়াল ও প্রধান ফটকে বড়সড় একটি গেইট। বাউন্ডারি দেয়ালের চারপাশে ফসলি জমি। ভেতরে রয়েছে বিলাসবহুল অফিস কক্ষ ও শ্রমিকদের থাকার জন্য আলাদা আলাদা সেমি পাকা ঘর। ভেতরে মূল কারখানায় প্রবেশে আরও একটি গেইট। যাতে মানুষ বুঝতে না পারে অবৈধ কোন কিছু তৈরি হচ্ছে।

এদিকে জানতে চাইলে, কারখানার মালিক মাওলানা আরিফ উল্লাহ্ বলেন, চকরিয়ার যত সাংবাদিক আছে আপনারা সবাই মাইক ও স্পিকার নিয়ে আসেন বিস্তারিত বক্তব্য দেবো।

হাবিব এন্ড ব্রাদার্সের মালিকের ছোট ভাই হাবিব খান বলেন, এ নিয়ে কুড়ি জন সাংবাদিক বক্তব্য নিয়েছেন। কিন্তু কেউ নিউজ করেননি। এটা পত্রিকায় নিউজ আসা দরকার। চকরিয়ায় পলিথিন তৈরি হচ্ছে এবং চার পাঁচজন শ্রমিক বেতন পাচ্ছে। এটি চকরিয়াবাসীর খুশির খবর।

অন্যদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, অবিলম্বে এ কারখানায় উৎপাদিত পলিথিন জব্ধ করে কারখানাটি সিলগালা পূর্বক চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ডের আশু নজরদারি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাহাবুবুল আলম জানান, নিউ কর্ণফুলি পলি ইন্ডাষ্ট্রি থেকে উৎপাদিত পলি ব্যাগ ও পাতলা পলিথিন পি.পি সাইজের পলিথিন সহ হরেক রকম পলিথিন চকরিয়ার বাহিরে ঈদগা, লামা, আলীকদম, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও লোহাগাড়ায় ট্রাকে করে প্রতিনিয়ত সাপ্লাই করে আসছে। তাছাড়া এসব পলিথিন হাঁসের দিঘী থেকে পৌর শহরের প্রবেশ পথ পর্যন্ত অবস্থিত সব ধরনের মুদি ও পানের দোকানে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন মহাসড়কে চলাচলকৃত যানবাহন ও সাধারণ মানুষের গায়ের উপর বাতাসে উড়ে এসব পলিথিন উড়ে এসে জুড়ে বসছে।

এ বিষয়ে চিরিংগা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সলিম উল্লাহ বলেন, চকরিয়ায় নিউ কর্ণফুলি পলি ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কোন পলিথিন কারখানার সরকারিভাবে অনুমোদন নেই। যদিওবা অনুমোদন থেকে থাকে তাহলে তা আমার অবশ্যই জানা থাকতো। কেননা, এই ইন্ডাস্ট্রির নামে যদি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে তা এসিল্যান্ডের মাধ্যমে আমাদের বরাবর তদন্তের জন্য পাঠাবে। কিন্তু গত কয়েক বছরের মধ্যে এমন কোন বিষয় আমাদের কাছে আসেনি।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তানভীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, লবণ মাটে ব্যবহৃত মোটা পলিথিন কিছু ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন থাকলেও পলি ব্যাগ, পাতলা পলিথিনের ব্যবহার, বাজারজাত, বিক্রি আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

তিনি বলেন, নিউ কর্ণফুলি পলি ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কোন কারখানার অনুমোদন আছে কী না আমার সঠিক জানা নেই। তবে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধন-২০০২) পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রি উৎপাদন, আমদানী বা বাজারজাত করে তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ড ও হতে পারে

আরও খবর