অনলাইন ডেস্ক •
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সরাসরি লাল-সবুজের নতুন পর্যটন ট্রেন চালু হচ্ছে। ১৩০ কিমি. গতিতে ছুটবে নতুন সেটের এই ট্রেন। ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের এই ট্রেন চালানোর পরিকাঠামো নির্মাণ কাজও দ্রুত শেষ হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৩২০ কিমি.-এর মধ্যে ২৪৮ কিমি. ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে আগেই।
বাকি ৭২ কিমি.-এর কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ১২৮ কিমি. ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ আগামী বছর জানুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে। এই রুটের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নতুন এক সেট দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল শুরু হলে রেলে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। একই সঙ্গে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে উড়াল রেলপথ নির্মাণের সমীক্ষাও চলছে।
কথা হয় রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সরাসরি ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি রয়েছে বর্তমান সরকারের। এটি সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাও। আমরা সেই কাজটিই করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প একটি। প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। ২০২২ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন ট্রেন চলছে। আমরা ইতোমধ্যে নতুন ইঞ্জিন-কোচ সংগ্রহ করছি। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হিসাবে চট্টগ্রামের দোহাজারী-রামু-ঘুনধুম অংশটি ব্যবহার করা হবে।
বর্তমান সরকার কক্সবাজারকে পরিপূর্ণ পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছে। এরই অংশ হিসাবে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত এক যুগে অত্যাধুনিক প্রায় চার শতাধিক যাত্রীবাহী কোচ ও প্রায় অর্ধশতাধিক লোকোমোটিভ ক্রয় করেছেন। এসব কোচ ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিমি.তে চলার কথা। কিন্তু প্রায় ৮০ শতাংশ পথই জরাজীর্ণ। ফলে ৮০ কিমি.র বেশি গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ রেলপথ নির্মাণ-সংস্কারের আগেই এসব ইঞ্জিন-কোচ ক্রয়ের কারণে-সাধারণ মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ১১৮ কিমি. ডাবল লাইন আগেই রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে তিনটি প্রকল্পে ১৩১ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ হয়েছে। বাকি ৭২ কিমি. ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণকাজ আগামী জুনে শেষ হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই পথ হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বিরতিহীন পর্যটন ট্রেনসহ দ্রুতগতি সম্পন্ন একাধিক ট্রেন পরিচালনা করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এ রুটে সরাসরি ট্রেন চালাতে আমেরিকা ও কোরিয়া থেকে অত্যাধুনিক লোকোমোটিভ ও যাত্রীবাহী কোচ আনা হচ্ছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ লোকোমোটিভগুলো ১৫০ কিমি. পর্যন্ত গতিতে ছুটতে পারবে। বাংলাদেশে এর আগে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও এত গতির লোকোমোটিভ আনা হয়নি। রেলওয়ে অপারেশন ও ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম সরাসরি ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যে লোকবলসহ যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার বৈঠক হচ্ছে। এতে সেবা প্রদানেও থাকবে নানা বৈচিত্র্য। পর্যটক ধরে রাখতে এ ট্রেনে আরও কী কী বৈচিত্র্য আনা যায় তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে রেলে। এদিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উড়াল লাইন নির্মাণেরও সমীক্ষা চলছে। ইতোমধ্যেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সমীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। উড়াল লাইন হলে মাত্র ১ ঘণ্টায় ঢাকা-কক্সবাজার চলাচল সম্ভব হবে। এদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দ্রুতগতির ট্রেন পরিচালনা করতে লাইন সংস্কারে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রেলপথ সিঙ্গেল লাইন রয়েছে। এ অংশটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে চলমান প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। যাতে সরাসরি ঢাকা-কক্সবাজার পর্যটন ট্রেন পরিচালনায় কোথাও বিঘ্ন না ঘটে বা গতি কমাতে না হয়। সরাসরি এ ট্রেনটি ঢাকা-কক্সবাজার চলাচলে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কথা হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একাধিকবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
২০২২ সালেই ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি পর্যটন ট্রেন চালাতে চাচ্ছে রেল। করোনায় কাজে কিছুটা গতি কম ছিল। কাজ দ্রুত শেষ করতে বর্তমানে অতিরিক্ত লোকবল, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। কক্সবাজারসহ তিনটি অত্যাধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। লাইন স্থাপনের সঙ্গে স্টেশন ভবন, সিগন্যাল ব্যবস্থা, লেভেলক্রসিং এবং প্রয়োজনীয় স্থাপনার কাজও শেষ হবে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে কাজ দুটি লটে ভাগ করা হয়েছে। চীনের চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি দুটি লটে কাজ করছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত ও ট্রেন চলাচল শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের চাপ রয়েছে। সম্প্রতি রেলভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-