চতুর্থ দফায় ভাসানচর যাচ্ছে ৪ হাজার রোহিঙ্গা

রফিকুল ইসলাম •

চতুর্থ দফায় আরও প্রায় ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচর যাচ্ছে আজ রোববার ও কাল সোমবার। আজ রোববার দুই ধাপে দুই হাজারের মত রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য উখিয়া থেকে সড়কপথে যাত্রার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন ক্যাম্প হতে স্বেচ্ছায় ভাসানচর গমনেচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মালামাল নিয়ে আনা হয়। দুপুর থেকে ক্যাম্পগুলো হতে রোহিঙ্গারা উখিয়া কলেজ মাঠের অস্হায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে আসতে শুরু করে। তৃতীয় দফায় ভাসানচর স্থানান্তরের ১৫ দিনের মাথায় আজ ও কাল ৪ ধাপে এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
দেশের একটি দায়িত্বশীল সংস্থার তত্বাবধানে শুরু থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প হতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। এবারও তাদের নেতৃত্বে চতুর্থ দফার প্রথম ধাপে আজ রোববার দুপুরে এবং বিকেলে উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্টে বিভিন্ন ক্যাম্প হত আগত রোহিঙ্গাদের রাখার খবর পাওয়া গেছে।

আগের মতো উখিয়া কলেজ মাঠের অস্হায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে দিনে দু’ভাগে ভাগ করে বাসগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সোমবার যারা ভাসানচরের পথে রওয়ানা হবেন তারা রবিবার সন্ধ্যা ও সোমবার সকাল-দুপুরে ট্রানজিট পয়েন্ট আসবে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। দু’দিনের যাত্রায় প্রায় ৭২টি বাস, একাধিক ট্রাক ও প্রয়োজনীয় অন্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবারও স্বেচ্ছায় অন্তত ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পৌঁছে দেওয়া হবে। শনিবার বিকেল থেকে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠের অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হচ্ছে।

তবে, এ বিষয়ে সংশ্লিস্ট কেউ মুখ খুলছেন না। কিন্তু রবিবার ও সোমবারের স্থানান্তর নিয়ে শনিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি মিটিং করেছে বলে জানিয়েছে অসমর্থিত সূত্র।
নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝিরা (রোহিঙ্গা নেতা) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে ভাসানচরে যাওয়াদের হাল হকিকত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে এখন বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আগ্রহী হয়ে সেখানে যেতে অপেক্ষা করছে। তবে প্রথম যাত্রার আগে তাদেরকে অনেক বুঝিয়েও জড়ো করা কষ্টকর ছিল।

তারা জানান, এখন চিত্র পাল্টেছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে নিজেরাই স্বেচ্ছায় পরিবারের সদস্যদের নাম তালিকাভুক্ত করাচ্ছে। গত ৪ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি যাদের আত্মীয়স্বজন গেছে, তাদের কাছে ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধার খবর শুনে অনেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছুক হয়ে উঠেছে। তারা আরও জানায়, আগেরদিন বিকেলে অনেকেই প্রথম ট্রিপের যাত্রী হতে উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্টে এসে পড়েছে।

সূত্র মতে, নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঝড় ও জলোচ্ছ¡াস থেকে সুরক্ষায় রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থাও। বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়ে তারা ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করে।

উল্লেখ্য, দু’বছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তাদের অনিচ্ছার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিলো না। অবশেষে এর যাত্রা শুরু হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করছেন।গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ জন, ২৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ৪২৮টি পরিবারের এক হাজার ৮০৫ রোহিঙ্গা এবং ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি আরও প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তরিত হয়েছে। ফলে সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তরিত হয়েছে।

আরও খবর