কক্সবাজারের সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হচ্ছে কক্সবাজার। প্রাকৃতিকভাবে আকর্ষণীয় হওয়ায় আদিকাল থেকেই কক্সবাজার পর্যটকদের আকৃষ্ট করে আসছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত এখানে অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণে ১৫২ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। কক্সবাজারের আদি নাম ছিল পালংকি। তত্কালীন ব্রিটিশ শাসন আমলে কক্সবাজারের মহাপরিচালক ছিলেন ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স। তিনি সেসময় কক্সবাজারের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। হিরাম কক্সের মৃত্যুর পর তার নামানুসারে এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই থেকে পালংকি থেকে কক্সবাজার নামকরণ হয়ে যায়। দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় কক্সবাজারে সারা বছর ধরে দেশি পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে শীতের মৌসুমে পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যায়।

পর্যটননগরী কক্সবাজারকে আকর্ষণীয়ভাবে সজ্জিত করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হওয়া শুরু হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এখানে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য হোটেল কটেজ, মোটেল, পাঁচতারা হোটেল, খাবার হোটেল রয়েছে। এখানে রয়েছে ঝিনুক মার্কেট। বার্মা, থাইল্যান্ড, চীন থেকে আনা পণ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে বার্মিজ মার্কেট। এখানে রয়েছে দেশের একমাত্র পিস একুরিয়াম। আরো রয়েছে প্যারাসেলিং, ওয়াটার বাইকিং, বিচ বাইকিং, কক্সকার্নিভাল সার্কাস শো, দরিয়া নগর ইকোপার্ক, কক্সবাজার, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত অসংখ্য স্থাপত্য, ফিউচার পার্ক, শিশুপার্ক এবং অসংখ্য ফটোসুট স্পট, এখানে আরো আছে টেকনাফ জিওলজিক্যাল পার্ক। এখানে উপভোগ করার জন্য রয়েছে নাইট বিচ কনসার্ট। সমুদ্রসৈকতকে লাইটিং করার মাধ্যমে এখানে রাতের বেলায় সমুদ্র উপভোগ করার সুযোগ করা হয়েছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এখানে নির্মিত হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সি-একুরিয়াম। ক্যাবল কার এবং ডিজনী ল্যান্ড নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কক্সবাজার সড়ক পথে এবং আকাশ পথে যাতায়াত করা যায়। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে বাস, কার মাইক্রোবাসে সরাসরি যাতায়াত করা যায়। কক্সবাজারে রয়েছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে কক্সবাজার যাওয়া যায়। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা কক্সবাজারে বিদ্যমান থাকায় সরকার কক্সবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সরকার কক্সবাজারের উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১২টিসহ ৬৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার প্রায় ১৩ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। দু-একটি ছাড়া বেশির ভাগ প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধন করা হয়েছে। কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থার কারণে পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অধিকাংশ পর্যটক সড়ক পথে যাতায়াত করে থাকে, সড়ক ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কক্সবাজার পৌঁছা যায় না। সড়ক পথে রাস্তার ওপর অসংখ্য হাটবাজার, ট্যাক্সি, ট্যাম্পো, বাসস্ট্যান্ড থাকায় এখানে নিত্য যানজট লেগে থাকে। যানজটের মধ্যে পড়ে পর্যটকরা দুর্ভোগের শিকার হন। এসব হাটবাজার, বাস, ট্যাক্সিস্ট্যান্ডগুলো রাস্তার ওপর থেকে সরিয়ে নিলে দুর্ভোগের অবসান হত। সড়ক পথে যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচলের ব্যাপারে হাইওয়ে পেট্রোল পুলিশের কোনো তত্পরতা দেখা যায় না। বর্তমানে কক্সবাজার সড়ক পথে অবাধে ধীর গতির টমটম চলার কারণে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া এই সড়কে বেপরোয়া যানবাহন চলাচল করার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ সড়ক সরু হওয়ার কারণে যানবাহনগুলোকে বিপজ্জনকভাবে চলাচল করতে হয়। সড়ক পথে রাস্তায় চলে চাঁদাবাজি। এসব চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পর্যটকরা সবসময় বিব্রত হয়ে থাকেন। কক্সবাজার সড়ক পথের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এগুলো বাস্তবায়িত হলে দুর্ভোগ কিছু কমবে। কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা দ্রুত এবং আরামদায়ক করার লক্ষ্যে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল পথ নির্মাণ করা হচ্ছে। রেল পথের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে রেল যোগাযোগ চালু হওয়ার কথা। এখানে উন্নত মানের রেল সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রেল যোগাযোগ চালু হলে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা দশগুণ বেড়ে যাবে। কারণ রেল ভ্রমণ আরামদায়ক নিরাপদ হওয়ার কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজার আসতে আগ্রহবোধ করবেন। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘ ১২৮ কিলোমিটার পথ সবুজ পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাবে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ চালু হলে কক্সবাজারের চেহারা সম্পূর্ণ পালটে যাবে।

আমাদের দেশের পর্যটন শিল্প দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। পর্যটন শিল্প থেকে এখন ভালো আয় হচ্ছে। কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার হবে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। আমরা আশা করব দেশের পর্যটন শিল্প এবং পর্যটকদের স্বার্থে সরকার পর্যটননগরী কক্সবাজারের উন্নয়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

লেখক :বিমা কর্মকর্তা

আরও খবর