কনকনে শীতে কাহিল জনজীবন

ডেস্ক রিপোর্ট •

কনকনে ঠান্ডা। বইছে হিম বাতাস। এতে জবুথবু হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ। শীত কাবু করে ফেলেছে রাজধানীকেও। কাহিল জনজীবন। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে আছে ছিন্নমূল ও অতিদরিদ্র মানুষ। বেড়েছে শীতজনিত রোগ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত শুক্রবার থেকে তাপমাত্রা দ্রুত কমছে। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আরও কয়েক দিন চলবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কুড়িগ্রামের রাজারহাটে, ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তার দ্বিগুণ, ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমে আচমকা শীত নেমেছে দিনাজপুরে।

স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, একদিনের ব্যবধানে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

চলতি মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ গত শুক্রবার শুরু হয়। সেদিন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রিতে নেমেছিল তেঁতুলিয়ায়। শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চলের মধ্যে টাঙ্গাইলে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি, ফরিদপুরে ৯ দশমিক ৭, মাদারীপুরে ৯ দশমিক ৮, গোপালগঞ্জে ৯ দশমিক ১, ময়মনসিংহে ৯, নেত্রকোনায় ৯ দশমিক ৫, শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ১, রাজশাহীতে ৮, ঈশ্বরদীতে ৭ দশমিক ৬, বগুড়ায় ৮ দশমিক ৫, বদলগাছীতে ৭ দশমিক ৫, তাড়াশে ৯ দশমিক ৩, রংপুরে ৮ দশমিক ৯, সৈয়দপুরে ৭, ডিমলায় ৮ দশমিক ৫, যশোরে ৮, কুমারখালীতে ৯ দশমিক ২, বরিশালে ৯ ও ভোলায় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
ঘন কুয়াশা

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ সমকালকে বলেন, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, শ্রীমঙ্গল, যশোর, কুষ্টিয়া ও বরিশালে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দুই-একদিন এমন আবহাওয়া বিরাজ করবে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয়তো আর নামবে না। দুই-একদিন পর তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে।

তিনি বলেন, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলের অধিকাংশ জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭-৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিরাজ করছে। এবার শৈত্যপ্রবাহ তীব্র হওয়ার শঙ্কা নেই। তবে চলতি মাসে আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ২৫ অথবা ২৬ ডিসেম্বরের পর ফের তাপমাত্রা কমতে পারে। এ সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এদিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলের বিরাজমান শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও কমার আভাস রয়েছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের (কৃষি ও সিনপটিক) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, এবার আবহাওয়ায় বিছুটা বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত দুদিন ধরে তাপমাত্রা কমতে থাকলেও ভোরের আলো ফুটতেই কুয়াশা কেটে যাচ্ছে। আকাশে মেঘ না থাকায় সকালে মিলছে সূর্যের মুখ। দিনভর সূর্যের আলো থাকলেও উত্তর দিক থেকে হিমেল হাওয়া বয়ে আসায় সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়ে কনকনে শীতে নিম্নআয়ের মানুষের আয় কমে গেছে। শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, তাপমাত্রা ১০-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮-৬ এর মধ্যে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৬ এর নিচে থাকলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আরও খবর