বিশেষ প্রতিবেদক : নাম ও ঠিকানার মিল থাকায় রামু থানায় দায়ের মাদক মামলায় নিরাপরাধ ব্যক্তি কারান্তরীণ থাকলেও অবশেষে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে প্রকৃত আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।
বুধবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জারুলিয়াছড়ি এলাকায় এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।
গ্রেপ্তার নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন (২৪) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জারুলিয়াছড়ি এলাকার মৃত আশরু মিয়ার ছেলে।
সে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক হলেও শ্বশুর মো. মনিরুজ্জামানকে পিতা সাজিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে বসবাস করে আসছিল।
অন্যদিকে নিরাপরাধ হওয়ার পরও মামলায় মিথ্যা আসামী হয়ে কারান্তরীণ থাকা নুরুল আমিন ওরফে নুরু (২৬) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জারুলিয়াছড়ি এলাকার নুরু সালামের ছেলে।
এজাহারের বরাতে ডিবি ওসি বলেন, চলতি বছরের গত ২৮ এপ্রিল রাতে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের চা-বাগান এলাকার রাস্তার মাথায় ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইয়ামাহা এফ জেড মডেলের মোটর সাইকেলের তেলের ট্যাংকের ভিতরে বিশেষ কৌশলে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় ৩০ হাজার ইয়াবাসহ মোহাম্মদ রশিদ ওরফে খোরশেদ (৩০) নামের এক যুবককে আটক করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মাদক সিন্ডিকেটের সহযোগীদের নাম পুলিশের কাছে স্বীকার করে।
“ স্বীকারোক্তিতে মোহাম্মদ রশিদ ওরফে খোরশেদ জানিয়েছিল, ইয়াবার চালান লেনদেনের সাথে তার সঙ্গে নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন, মো. বেলাল হোসেন, বশির আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান ওরফে গাছরারা নাম প্রকাশ করে। ”
ওসি বলেন, “ পরে আটক মোহাম্মদ রশিদকে নিয়ে মজুদ করা আরো ইয়াবার চালান উদ্ধারে চা-বাগান ভিতরে পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল। এতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তার সহযোগী ইয়াবা কারবারিরা গুলি ছুড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়ে। এতে দৌঁড়ে পালানোর সময় মোহাম্মদ রশিদ ও পুলিশের ৩ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে ( মোহাম্মদ রশিদ ) উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছিল। এসময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছিল দেশিয় তৈরী ১ টি বন্দুক ও ৩ টি গুলি। ”
এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে রামু থানায় মামলা দায়ের করেছিল বলে জানান শেখ মোহাম্মদ আলী।
এ মামলায় নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন, মো. বেলাল হোসেন, বশির আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান ওরফে গাছরাকে পলাতক দেখিয়ে আসামী করা হয়।
ডিবি ওসি বলেন, “ এদিকে গত ২১ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ মামলার পলাতক আসামী নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। এতে নাম ও ঠিকানা মিল থাকায় প্রকৃত আসামী মনে করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জারুলিয়াছড়ি এলাকার নুরু ছালামের ছেলে নুরুল আমিন ওরফে নুরুকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে মামলা আসামী দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ”
কিন্তু মামলাটির প্রথম তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিদর্শক রুপল চন্দ্র দাশ অন্যত্র বদলী হলে তদন্তভার দেয়া ডিবি পুলিশের ওসি শেখ মোহাম্মদ আলীকে।
শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, “ মামলাটির তদন্তভার পাওয়ার পর বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারেন, মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারান্তরীণ থাকা ব্যক্তি প্রকৃত আসামী নয় এবং সে নিরাপরাধ। তবে এজাহার নামীয় ৩ নম্বর আসামী নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন এখনো গ্রেপ্তার এড়িয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করে। পরে এ তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রকৃত আসামী নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। ”
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামীকে আদালতে সোপর্দ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে জানান ডিবি ওসি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-