সমুদ্র সৈকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রতিমা বিসর্জন

সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার জার্নাল •


সোমবার (২৬ অক্টোবর) হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। মর্ত্যলোক ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন মা। ভক্তরা অশ্রæসজল চোখে বিসর্জন দিয়েছেন দুর্গা প্রতিমাকে।

দশমীর ভক্তরা মত্ত হয়ে থাকেন সিঁদুর খেলায়। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার সিঁদুর খেলা হয়নি। মন্ডপে মন্ডপে এখন বিষাদের ছাপ। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবার বিজয়া শোভাযাত্রা হয়নি। সব মন্ডপ ও মন্দিরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করেন। ভক্তরা বলেন,

২৬ অক্টোবর মায়ের বিদায় হয়েছে। মায়ের বিসর্জনের মধ্যদিয়ে করোনা মহামারি দূর হয়ে আমরা যেন ফের নতুন করে আগের ন্যায় সুখে বসবাস করতে পারি এমন কামনা করছেন।

বিশেষ করে সমুদ্র সৈকতে কক্সবাজার শহর এলাকাসহ পাশর্^বর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নেচে গেয়ে ট্রাকবাহী প্রতিমা নিয়ে আসে ভক্তরা। সুখ ও আনন্দ নিয়ে এবছর দুর্গতিনাশিনী মা দেবী দুর্গা নৌকায় চড়ে মর্ত্যলোকে বা বাপের বাড়িতে আসেন এবং কৈলাসে বা শ^শুর বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চেপে।

আয়োজকরা জানান, এ বছর রামু ও সদর উপজেলা মিলে অর্ধশতাধিক প্রতিমা সৈকতে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। অন্য বছর আলোচনা সভাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে উৎসব সম্পন্ন হলেও এ বছর শুধুমাত্র বিসর্জন মন্ত্র পাঠ করেই প্রতিমা সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া একই সময়ে কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।

ট্রাকে করে প্রতিমা আসতে আসতে ভরে যায় অনুষ্ঠানস্থল। সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। শুধু তাই নয়, নাচে-গানে এক অন্য রকম আনন্দ মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকত। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমাগম ঘটে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো মানুষের।

কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা জানান, এ বছর জেলায় ২৯৯টি মন্ডপে পূজা উদযাপন হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৪টি প্রতিমা পূজা, ১৫৫টি ঘট পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ২৬ দফা নির্দেশনা মেনে এবার দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে করোনা মহামারির কারণে এবার আলোচনা অনুষ্ঠান আমরা করিনি। অনুষ্ঠানস্থল নিরাপদ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়েছে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রণজিৎ দাশ জানান, বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠান দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে।

প্রতীমা বিসর্জনে জেলা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য, ফায়ার সার্ভিস বাহিনী ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশের উদ্যোগে সৈকতপাড়ে নির্মিত করা হয় বেশকয়েকটি অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। সেই সব টাওয়ার থেকেই পুরো সৈকতের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, জেলার আট উপজেলার ২৯৯টি পূজামন্ডপে তিনস্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসবের আজ বিজয়া দশমী।

সমুদ্র সৈকতে বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল।

আরও খবর