কক্সবাজার •
কক্সবাজার জেলায় বেড়েই চলেছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। এসব ঘটনায় অভিযোগ করলেও বিভ্রান্তিমুলক তদন্ত প্রতিবেদনের কারণে সুবিচার পাচ্ছেন না নির্যাতিতরা এমন অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নির্যাতিতরা।
সর্বশেষ আলোচিত নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে মহেশখালীতে। দফায় দফায় নির্যাতন চালিয়ে একজন গৃহবধুকে হত্যা করে বাড়ির উঠানে। এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। পারিবারিক কলহ ও প্রভাবশালী কর্তৃক জেলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
সম্প্রতি চকরিয়ায় নারী নির্যাতনের ঘটনায় একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিনি রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ওই চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রভাবশালীরা অবস্থান নেওয়ায় সাধারণ মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করে না।
জেলার সর্বশেষ নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে মহেশশালীর কালারমারছড়ায়। একজন গৃহবধুকে স্বামী কর্তৃক প্রতিনিয়ত নির্যাতন করায় স্থানীয় আদালত, থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ধর্ণা দিয়েও বিচার না পেয়ে পুণরায় স্বামীর ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয় হত্যার শিকার ওই গৃহবধু।
স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলা করায় ওই গৃহবধুকে হত্যা করে বাড়ির উঠানে লাশ পুতে রাখা হয়। ৬ দিন পরে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, নিহত গৃহবধু আফরোজা নির্যাতনের বিচার চেয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় ঘাতক স্বামী তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলে নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়। তবে স্থানীয় মেম্বার লিয়াকত আলী জানিয়েছেন এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। একজনের পক্ষে হত্যা করে লাশ পুতে ফেলা সম্ভব নয়। তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে আরো রহস্য। এ হত্যাকান্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে।
এদিকে কালারমারছড়ার নোনাছড়িতে দুই এতিম মহিলার উপর চলানো হয়েছে বর্বর নির্যাতন। অভিযোগ রয়েছে আহত দুই মহিলা থানার আশ্রয় নিয়েও কোন সুবিচার পাননি। অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বার-বার প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। নির্যাতনের শিকার জোবেদা খাতুন জানিয়েছেন, পুলিশের উপস্থিতিতে আমরা এতিম দুই বোনের উপর মহেশখালীর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা শ্লীলতাহানীসহ মারধর করে আহত করলেও কোন সুবিচার পাইনি।
আদালতে মামলা করলে তা তদন্তের জন্য কালারমারছাড় পুলিশ ফাড়ির তৎকালীন আইসি রুহুল আমিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মেডিকেল সনদ থাকা সত্তেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি ঘটনার বিপরীত একটি প্রতিবেদন দেন আদালতে। এখন আমাদের যাওয়ার কোন স্থান নাই। বিচারের সব স্থান প্রভাবশালীদের দখলে। আমাদের মত অনেক মহিলা নির্যাতনের শিকার হলেও কোথাও বিচার না পাওয়ায় মুখ খুলতে সাহস করছে না।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর জুমছড়ির এক কিশোরীকে আটকে রেখে দেড় মাস ধরে গণধর্ষণের অভিযোগে র্যাব ধর্ষকসহ ৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনায় কেউ মুখ না খুললেও দৈনিক কক্সবাজারের সংবাদের উপর ভিত্তি করে র্যাব অভিযান চালিয়ে নির্যাতিতাকে উদ্ধার ও ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে। রামু মিঠাছাড়িতে ধর্ষিত হয়েছে এক প্রতিবন্দ্বী কিশোরী।
গত ১৯ অক্টোবর চকরিয়ায় ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে মায়ের স্পর্শকাতর স্হানে মরিচের গুড়া দিয়ে নির্যাতন করা হয়। মরিচের গুড়া দিয়ে নারী নির্যাতনের বিষয়টি সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছে। কক্সবাজার সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমর চন্দ্র দেব নাথ জানিয়েছেন, নারী নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
নির্যাতিতরা কিভাবে সুবিচার পাবে তা নিয়ে সকলের আলোচনা করা প্রয়োজন। এতে সচেতনতা সৃষ্টি হবে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডঃ ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, নির্যাতিত যেকোন নারী আইনের আশ্রয় নিতে পারে। অনেকেই কিভাবে আইনগত সুবিধা পাবে তা জানে না বিধায় সুবিচার পায় না। এতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই উত্তম পন্থা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-