নিজস্ব প্রতিবেদক •
দেশের প্রথম পর্যটননির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক। কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং সমুদ্রতীরে এই পর্যটন অঞ্চল গড়ে উঠছে। পরিকল্পিত এই আধুনিক পর্যটন পার্কে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে বেশ কিছু কোম্পানির বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
এগুলো পর্যালোচনা করে ইতোমধ্যে ১২টি কোম্পানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে বেজার নির্বাহী বোর্ড। কোম্পানিগুলো পার্কের মধ্যে তারকা হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণ করবে। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে।
বেজা জানায়, পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ১ হাজার ৪৭ একর আয়তনের এ পার্কে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রেখে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়া ১২ কোম্পানি ১১৬ একর জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করবে।
এতে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। ১২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি বিদেশি কোম্পানি আছে। সিঙ্গাপুরের ইন্টার এশিয়া গ্রুপ ৮৩ একর জমিতে ৯ কোটি ডলার বিনিয়োগে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট করবে। এতে প্রায় ৬ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। আর নেদারল্যান্ডসের লিজার্ড স্পোর্টস বি.ভি. কোম্পানিও হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণ করবে।
এ ছাড়া দেশি কোম্পানি হোয়াইট অর্কিড গেস্ট হাউস, মুনলাইট ওভারসিস, বিসিএস মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার কো-অপারেশন সোসাইটি, ডাটা সফট সিস্টেম বিডি ও প্রজেক্ট প্রমো, নিট প্লাস, বায়োটেক প্রিন্টিং প্লাস, ইফাদ অটোস, ইফাদ মোটর, দি কক্স টুডে ও সুইট ড্রিম ম্যানেজমেন্ট বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। ৩টি কোম্পানির সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি সই করেছে বেজা। আরও ৪টি কোম্পানি জমি বরাদ্দপত্র ইস্যু করেছে।
এই পার্কের পরিকল্পিত উন্নয়নে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস ও কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দোহওয়া কনসালট্যান্টস যৌথভাবে মহাপরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছে। বেজা মাটি ভরাট; ভূমি, সড়ক উন্নয়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম করছে। পার্কটি টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে ৮ কিলোমিটার ও কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে ২ ঘণ্টার দূরত্বের মধ্যে। আর ঢাকা থেকে দূরত্ব ৪৫০ কিলোমিটার। এটি পাহাড় ও সমুদ্রসৈকত নিয়ে বহুমুখী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ চমৎকার একটি অঞ্চল।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী সমকালকে বলেন, বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ উপযোগী প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য মাথায় রেখেই এ পার্কের উন্নয়ন করা হচ্ছে। এখানে বাঁধ ও স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে। এখন কিছু এলাকায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। ওই এলাকায় পর্যাপ্ত বালি পাওয়া যাচ্ছে না। জানুয়ারির পর বিকল্প উপায়ে বালি ও মাটি সংগ্রহ করে ভরাট করা হবে। আগামী মৌসুমে মাটি ভরাট কাজ শেষ করে ২০২১ সালে বিনিয়োগকারীদের জমি হস্তান্তর করা হবে।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, বেজা প্লট হস্তান্তর করলে নকশা অনুমোদনের জন্য দেওয়া হবে। নকশা অনুমোদনের পর দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করবেন তারা। তাদের নির্মাণ করা রিসোর্ট বিদেশি পর্যটকদের উপযোগী করা হবে।
মহাপরিকল্পনা :খসড়া মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ও সমস্যা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য, দেশি সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক পর্যটকবান্ধব করা হবে।
এর সঙ্গে কক্সবাজারের অন্যান্য পর্যটন স্থানের একটি সামগ্রিক যোগসূত্র স্থাপন করা হবে। পার্কের ৩০ শতাংশ বা ৩১৫ একর জায়গায় রিসোর্ট ও হোটেল, লেক তীরবর্তী রিসোর্ট ও হোটেল, সাধারণ হোটেল এবং সার্ভিস স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট করা হবে। ৮৩ একর জায়গা শপিং সেন্টার, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, অ্যামফিথিয়েটার, কনভেনশন সেন্টার, আ্যমিউজমেন্ট পার্ক হবে। ২০ একরে প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, ফায়ার স্টেশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র করা হবে।
২৬ একর জায়গায় পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট, কঠিন বর্জ্য ও ই-বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট, পাওয়ার প্ল্যান্ট, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, পানি পরিশোধন ও সংরক্ষণাগার, সোলার প্যানেল এবং বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট হবে। ১৩ একর জায়গায় ওয়েলফেয়ার সেন্টার ও বৃদ্ধাশ্রম করার প্রস্তাব রয়েছে। ৮ একর জায়গায় বাস ডিপো, ট্রান্সপোর্টেশন হাব, হেলিপ্যাড ও জেটি স্টেশন করা হবে।
৫৪ একর জায়গায় রাস্তা, হাঁটা পথ ও বাইসাইকেল লেনের জন্য রাখা হবে। এই পার্কের ৫১ শতাংশ বা ৫২৮ একর জায়গা সমুদ্রসৈকত, ঝাউবন, লেক, সেন্ট্রাল গ্রিন ও পার্ক করা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-