চট্টগ্রাম প্রতিদিন •
কক্সবাজারের কলাতলীতে সরকারের তৈরি করা ৪৬৯টি ফ্ল্যাটের ৬১টিই নামে-বেনামে ভাগ করে নিয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চার কর্মকর্তা। এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে আহ্বান করা হয়নি কোনো দরপত্রও। এই জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে দোহাই দেওয়া হচ্ছে মন্ত্রী-এমপিদের। সরকারি ওই ফ্ল্যাট বিক্রির তথ্যও বিস্ময়করভাবে কাউকে জানানো হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরাদ্দপত্র ইস্যুর রেজিস্টার খাতায় চোখ বুলালেই উঠে আসবে অনিয়মের আরও সব চমকজাগানো তথ্য।
৬১টি ফ্ল্যাট নিয়ে লুটপাটের নেপথ্যে রয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চার কর্মকর্তা। এরা হলেন চট্টগ্রাম অফিসের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী কাওসার মোর্শেদ, উপসহকারী প্রকৌশলী পলাশ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন।
shopping bag home delivery
শুধু কক্সবাজারেই নয়, এই চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রামের হালিশহর হাউজিং এস্টেটের জি ব্লকের ২৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পেও। সেখানেও ফ্ল্যাট বরাদ্দে একইভাবে অনিয়ম করেন ওই চার কর্মকর্তা। সেখানে তাদের সঙ্গে আরও জড়িত আছেন হালিশহরের প্রকল্প কর্মকর্তা ফিরোজ আহমদ, নিলুফার বেগম ও আব্দুর রাফে খান চৌধুরী।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সরকারি ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন হীরা নামের এক ভুক্তভোগী। গত ১ অক্টোবর এসব অনিয়মের অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার কলাতলী এলাকায় সরকারি জমিতে ৪৬৯টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস। ওই প্রকল্পের প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ৭৫০ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্ল্যাট দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বরাদ্দ পাওয়া এসব ফ্ল্যাটের টাকা কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগও রাখা হয়। চার বছরের মধ্যে ফ্ল্যাটের পুরো অর্থ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। তবে তিন মাস পর পর এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭০ টাকা করে পরিশোধও করেছেন অনেকেই।
সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের কলাতলীতে ৪৬৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বরাদ্দ পান মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়া, অন্যান্য কোটায় নিখিল কুমার চাকমা, ব্যবসায়ী কোটায় মো. তৌহিদুল আলম। এছাড়া সংরক্ষিত কোটায় মোহাম্মদ মীর মিজারুল কায়েস, মো. ইসমাইল হোসাইন, মাহমুদুল হক, শিরিন রুখসানা, ফিরোজ আহমদ ও নুজহাত হাসিনাসহ আরও অনেকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন।
দুদক সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর অনুসন্ধান কর্মকর্তা বলেন, ‘কক্সবাজার জেলার কলাতলী এলাকায় সরকারি জমিতে ফ্ল্যাট অনিয়মের অনুসন্ধান শুরু হয় গত সপ্তাহে। সেখানে ৪৬৯টি মধ্যে ৬১টি ফ্ল্যাট সংশ্লিষ্ট দফতরের ৪ কর্মকর্তা নিজেরাই নিয়েছেন। তাদের পছন্দের লোকজনের কাছে এসব ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-