স্থায়ী বসবাসের স্বপ্নে ক্যাম্প ছাড়ছে রোহিঙ্গারা

নিজস্ব প্রতিবেদক •

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে সরকার যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দিলেও এসব রোহিঙ্গারা তাতে মোটেই সন্তুষ্ট নয়। এখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে সোনার হরিণ ধরার স্বপ্নে বিভোর এসব রোহিঙ্গারা বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য অতি সু-কৌশলে ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে।

আগে বিভিন্ন যানবাহন থেকে পলায়নরত রোহিঙ্গাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে। পুরো লকডাউনে তাদের নিস্ক্রিতার সুযোগে প্রতিনিয়ত শত শত রোহিঙ্গা স্বপরিবারে ক্যাম্প থেকে পালাচ্ছে। এসব রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত যাত্রাপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না হলে দেশের জন্য ভবিষ্যতে এসব রোহিঙ্গারা বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা জালাল আহমদ বলেন, নতুন করে যেসব রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিলেও তারা নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। যে কারণে সরকারি ভাবে প্রদত্ত ত্রাণ সামগ্রীর আওতার বাইরে থাকা এসব রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে। ক্যাম্প থেকে কোন রোহিঙ্গা পরিবারগুলো পালাচ্ছে এমন তথ্য উদ্ঘাটন করতে গেলেও ক্যাম্প প্রশাসন ব্যর্থ হবে। কারণ তারা তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা নয়। বিভিন্ন সময়ে তারা প্রশাসনের অগোচরে ক্যাম্পে আগে থেকে থাকা আত্মীয় পরিজনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে কয়েকমাস থাকার পর উন্নত জীবন যাপন বা বিদেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন নিয়ে অভিনব কায়দায় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।

ক্যাম্প কমিটির সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গার লেবাছে বসবাসরত কতিপয় রোহিঙ্গা দালাল চক্র বিদেশে পাড়ি জমানোর ভ্রান্ত আশা দিয়ে অশিক্ষা-কুশিক্ষায় জর্জরিত রোহিঙ্গা পরিবারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। পরে সুযোগ বুঝে এসব রোহিঙ্গাদের অচেনা জায়গায় অপেক্ষা করার কথা বলে দালাল চক্র সটকে পড়ে। লম্বাশিয়ায় বসবাসরত এমন একজন রোহিঙ্গার নাম ছালামত উল্লাহ। পেশায় তিনি একজন কোরআনে হাফেজ। দালাল চক্রের হাতে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে ক্যাম্পে ফিরে আসা এ রোহিঙ্গা তার অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, যারা বিভিন্ন প্রলোভনে ক্যাম্প ছাড়ছেন তাদের কোন না কোন ভাবে বিপদ সংকুল অবস্থায় সবকিছু হারিয়ে ক্যাম্পে ফিরে আসতে হবে।

ক্যাম্প-২ এর হেড মাঝি জকরিয়া ও আবু তাহের মাঝি জানান, তাদের সাথে ক্যাম্পে আসা অনেক পরিবারকে দেখা যাচ্ছে না। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে দালালের খপ্পরে পড়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়েছে। তারা বলেন, কেহ কেহ স্থায়ী ভাবে বসবাসের কারণে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভাসমান পরিবার হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকেই সমুদ্রে মাছ ধরার নৌকায় চাকুরী করার সুবাধে উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

ক্যাম্প ইনচার্জ মোঃ খলিলুর রহমান বললেন, রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্প প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ক্যাম্পে বাইরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তার জানার কথা নয়। তবে ক্যাম্প থেকে চলে যাওয়ার সময় ক্যাম্প পুলিশের হাতে ধরা পড়লে ওইসব রোহিঙ্গাদের পুনরায় পূর্ব নির্ধারিত স্থানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

উখিয়া থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, তারা তড়িগড়ি করে সবেমাত্র দায়িত্ব্ভার নিয়েছেন। সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করে ওই কর্মকর্তা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট হবেন।

আরও খবর