বাংলা ট্রিবিউন ◑ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা পুলিশের মাধ্যমে গুলিবর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে মনে করে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা তদন্তে গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। ছোটখাটো ঘটনাগুলোতে অস্ত্রের ব্যবহারে বাহিনীর সদস্যরা অতিমাত্রায় সংবেদশীল থাকেন, যা বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এমন তথ্যই জানিয়েছে। সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনের সুপারিশে কী লেখা রয়েছে সেই বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিপোর্টের ভেতরে কী আছে আমরা এখনও দেখিনি। এখন আমাদের সচিব এটা বিশ্লেষণ করে দেখবেন। আপনারা জানেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি তদন্ত চলছে। সেজন্য আমরা প্রকাশ্যে কিছু জানাতে পারবো না। আমরা আদালতকে জানিয়ে দেবো এ বিষয়ে। আদালত মনে করলে আমাদের কাছ থেকে অফিসিয়ালি নিয়ে যাবেন। এটা আদালতের এখতিয়ার।’
এদিকে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি তাদের ৮০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ১২টি সুপারিশ করেছে। ঘটনার ক্রম অনুযায়ী প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, ঘটনার ক্রাইম সিন সংরক্ষণে আরও সতর্ক হতে জেলা পুলিশকে নির্দেশনা দিতে হবে। আমেরিকান তদন্ত সংস্থা এফবিআই’র আদলে যৌথ তদন্ত দল গঠন করতে হবে। তবে এ বিষয়ে কমিটির পুলিশ সদস্য নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও গুলিবর্ষণের ঘটনায় নির্বাহী তদন্তের সময় নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাদের ভূমিকাও নজরদারির কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে আর কী কী সুপারিশ করা হয়েছে সেটা জানা সম্ভব হয়নি।
সোমবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট ৬৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জবানবন্দি নিয়েছি। তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এই ঘটনাটি কোনোভাবেই তাদের কাজকে ম্লান করবে না।’
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলিকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে সদস্য করা হয়েছিল কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধিকে।
কিন্তু এর পরদিনই (৩ আগস্ট) তদন্ত কমিটি ৪ সদস্যবিশিষ্ট করে পুনর্গঠন করা হয়। এতে কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির আলোকে এতে সদস্য করা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. জাকির হোসেন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদকে।
গত ৩ আগস্ট তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করে। এ সময় কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সরকার ৭ কর্ম দিবস সময় নির্ধারণ করে দিলেও তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু এরমধ্যে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে পরে আরও ৭ দিনের সময় চায় এবং তা বাড়ানো হয় ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ৩ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত দল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-