আল আমিন, এম জমিন ◑
ইয়াবা চালানের বড় রুট কক্সবাজারে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা জড়িয়ে যাচ্ছে মাদকের কারবারে। জেলা ও থানার কমিউনিটি পুলিশিং-এর পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে তারা এই অবৈধ বাণিজ্য করছে। এইসব মাদক ব্যবসায়ী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারেও মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে পাচার করছে দেশের বিভিন্নস্থানে। সারা দেশে মাদক বিরোধী অভিযান চলার সময়ও তারা কোনোরকম ভীতি ছাড়াই নিজ নিজ এলাকায় ছিল। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি থানা পুলিশ।
সিনহা হত্যাকাণ্ডের মামলায় পুলিশের তিন সাক্ষী এলাকায় মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিল বলে র্যাব জানতে পেরেছে। পুলিশের স্থানীয় প্রথাগত সোর্স হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশের সদস্যরা কোনো রকম ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তারা টেকনাফে দিনের পর দিন আরো বেশি বেপরোয়া হয়েছে।
নিজেরা মাদক ব্যবসায়ী হয়ে অন্যকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে এমন অভিযোগ অনেক।
কক্সবাজারে জেলা কমিউনিটি পুলিশের প্রায় ৪০ সদস্য মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে কক্সবাজার জেলার পুলিশের কিছু কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কমিউনিটি পুলিশের এইসব সদস্য কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া ও উখিয়া এলাকায় সক্রিয়। গত বছরের ২১শে অক্টোবর জেলা কমিউনিটি পুলিশিং-এর সম্মেলনে একাধিক মাদক কারবারীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ জেলার শীর্ষস্থানীয় পদও পেয়েছেন বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে র্যাব আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (কমিউনিটি পুলিশিং) সহেলী ফেরদৌস গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘সমাজের গণ্যমান্য লোকদের নিয়েই কমিউনিটি পুলিশিং-এর কমিটি করা হয়। কমিটি করার সময় খুব একটা লোক ধরে ধরে যাচাই-বাছাই করার সুযোগ ও সময় থাকে না। তিনি আরো জানান, কমিউনিটি পুলিশের কমিটি গঠন হওয়ার পর কারো বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অপরাধের অভিযোগ পুলিশের কাছে এলে তখন তাকে বাদ দেয়া হয়। এখানে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অপরাধ দমন করার জন্যই কমিউনিটি পুলিশ গঠন করা হয়। কমিউনিটি পুলিশিংয়ে কোনো অপরাধীর থাকার সুযোগ নেই।’
র্যাব সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার হচ্ছে ইয়াবাসহ নানা মাদকের অন্যতম পাচারের বড় রুট। মূলত সীমান্ত এলাকা থেকে এই মাদক দেশে আসে। আনানেয়া এবং পাচারে সহজ পদ্ধতি থাকার কারণে কক্সবাজারে কিছু দুর্বৃত্ত মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালানোর জন্য কিছু দুর্বৃত্ত কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্য পদকে ব্যবহার করছে। তারা কক্সবাজার জেলা এবং থানা কমিউনিটি পুলিশের সদস্য। তাদের নাম এখন র্যাবসহ গোয়েন্দাদের হাতে।
সূত্র জানায়, কক্সাবাজার জেলায় যেসব কমিউনিটি পুলিশের সদস্য মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের বড় অংশ টেকনাফ ও উখিয়া এলাকায় বসবাস করে। মূলত তারা সীমান্ত এলাকা থেকে এসব মাদক বাংলাদেশে নিয়ে আসে। তাদের একাধিক নামও জানা গেছে। কক্সাবাজার জেলা কমিউনিটি পুলিশিং-এর যেসব সদস্য মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা হচ্ছে- আজিজুল ইসলাম, সোহেল, মো. আসাদুজ্জামান, মো. লিটন, আবির হোসেন, ইয়াবা ডন শাকুর, ফরিদুল ইসলাম, মামুনূর রশীদ, আরিফুল ইসলাম এবং সেলিম উদ্দিন। এইসব সদস্য জেলার কমিউনিটি পুলিশিং-এর বড় পদে নেই। তারা শুধুমাত্র কমিটির সদস্য হওয়ায় নাম ভাঙিয়ে মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর তারা এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে। র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজছে।
সূত্র জানায়, এই সদস্যদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের কিছু সদস্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা থানার কিছু পুলিশকে বড় ধরনের মাসোহারা দিয়ে থাকে। একদিকে কমিউনিটি পুলিশিং-এর সদস্য থাকা আরেক দিকে থানা পুলিশ ম্যানেজ থাকার কারণে তারা দিন দিন মাদক কারবারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-