আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম ◑
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে গত বুধবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখান। পাশাপাশি আসামি প্রদীপকে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। দুদকের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট সানোয়ার আহমেদ লাভলু যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় আসামি হওয়ার পর প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ আত্মগোপনে চলে গেছেন। এ অবস্থায় চুমকি যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দফতরে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
২৩ আগস্ট চুমকি কারণ ও তার স্বামী প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।
দুদক সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন প্রদীপ কুমার দাশ। এসআই পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করতে লাগামগহীন হয়ে পড়েন প্রদীপ। তার সম্পদ দৃশ্যমান হতে তাকে ২০০২ সালের পর থেকে। প্রদীপের সব সম্পত্তিই তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। যার বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের কোনো উৎস নেই।
২০১৮ সালে দুদকের তদন্ত কমিটি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত শুরু করে। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল তাদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হলেও চুমকি তা জমা দেন ২০১৯ সালের ১২ মে।
দুদকের মামলার বিবরণ অনুসারে, চুমকি তাদের সম্পদের বিবরণে দেখিয়েছেন, তার বাবা তাকে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট নগরের পাথরঘাটা এলাকায় একটি ছয়তলা বাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে, চুমকির দুই ভাই থাকলেও তারা বাবার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সম্পত্তি পাননি। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে ভবনটি তৈরি করেছেন এবং তা গোপন করার জন্য তিনি এটি তার শ্বশুরের নামে দলিল করেন। তার শ্বশুর সেটি তার (প্রদীপের) স্ত্রীর নামে লিখে দেন।
দুদকের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চুমকি কারণ পেশায় একজন গৃহিণী। তিনি কোথাও চাকরি করেন না। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট দানপত্র দলিল মূলে নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন পাথরঘাটা এলাকায় জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ি তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। শ্বশুরের কাছ থেকে প্রদীপের স্ত্রীর উপহার পাওয়া বাড়ি নিয়ে দুদকের তদন্তে দেখা যায়, চুমকি কারণকে তার পিতা একটি বাড়ি দানপত্র করে দিলেও তার অন্য ২ ভাই ও ১ বোনকে কোনো বাড়ি দানপত্র করেননি। এতে প্রতীয়মান হয়, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অর্জিত আয় গোপন করার উদ্দেশ্যে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে ওই বাড়ি নির্মাণ করে রূপান্তরপূর্বক পরে চুমকি কারণের নামে দানপত্র করে নিয়ে প্রদীপ দাশ ভোগদখল করছেন। প্রদীপের গৃহিণী স্ত্রী চুমকি কারণ কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে ২০১৩-১৪ সালে প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন।
পরে মৎস্য ব্যবসায়ী ও বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তিনি ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ কর বছরে আয়কর রিটার্নে কমিশন ব্যবসা বাবদ ব্যবসার মূলধন ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেখান। তবে দুদক তদন্ত করে দেখেন, কমিশন ব্যবসার লাইসেন্স, সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বা অন্য কোনো রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে পারেনি।
দুদক পিপি সানোয়ার আহমদ লাভলু জানান, মামলার ১ নম্বর আসামি চুমকি কারণ এখনও গ্রেফতার হননি বা আদালতে আত্মসমর্পণও করেননি। ফলে তিনি যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে দুদকের পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দফতরে আবেদন করা হয়েছে। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-