ক্যাম্পে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে রোহিঙ্গারা

সমকাল ◑

কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখন থেকে ইন্টারনেট সুবিধাসহ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে। এক পরিবারে মোবাইল ফোনের দুটি সিমও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রোহিঙ্গা কার্ড দেখিয়ে এ সিম ক্রয় করতে হবে। এতদিন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্ব বিবেচনায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বৈধ উপায়ে মোবাইল ফোনের সুবিধা পাচ্ছিল না। এখন ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার।

ক্যাম্পগুলোতে বৈধভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ থাকলেও নানা উপায়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন অপারেটরের সিম অবৈধভাবে ব্যবহার করে আসছিল। এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা। মিয়ানমারে থাকা স্বজনদের সঙ্গে এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা যোগাযোগ করে আসছিল। এসব অবৈধ উপায়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মাদক চোরাচালানসহ নানা অপকর্মও হচ্ছিল। সিমগুলো রেজিস্ট্রেশন না থাকায় মোবাইল ব্যবহার করে অপকর্মকারী রোহিঙ্গাদের আইনের আওতায়ও নেওয়া যাচ্ছিল না। এসব বিবেচনায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কার্যক্রমকে বৈধতা দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মোবাইল সিম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সভায় জননিরাপত্তা সচিব, পুলিশের আইজি, পররাষ্ট্র সচিব, বিজিবি, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সমকালকে বলেন, বাস্তবতার নিরিখে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালুর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশসহ নানা গোয়েন্দা সংস্থা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধমূলক বিষয়ে কথোপকথন চালিয়ে আসছে। ভিন্ন দেশের নেটওয়ার্ক থাকায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এসব নজরদারি করতে সমস্যা হতো। যে কারণে অনেক তথ্য জানা সম্ভব হতো না। এতে করে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য অনেকটা ঝুঁকি তৈরি হয় বলে সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন।

গতকালের সভা সূত্র জানায়, সভায় আলোচনায় উঠে আসে মিয়ানমার থেকে আসা মোবাইল নেটওয়ার্কের সিগন্যাল এখন বাংলাদেশের ১০ কিলোমিটারের বেশি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হলেও মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সব ধরনের মোবাইল যোগাযোগ চালিয়ে যেতে পারছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের উখিয়া এলাকায় মিয়ানমারের একাধিক মোবাইল অপারেটরের সিমকার্ড গোপনে বিক্রি হয় ক্যাম্প এলাকায়। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়। চলতি বছর জানুয়ারিতে সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের নীতিমালা অনুযায়ী এক দেশের জন্য বিভাজিত বেতার তরঙ্গের কাভারেজ কোনোভাবেই অন্য দেশের সীমান্তের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যেন এ ব্যাপারে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেয়। এর আগে গত বছর ১ সেপ্টেম্বর দেশের চারটি মোবাইল অপারেটর রোহিঙ্গাদের কাছে কোনো সিম বিক্রি করতে পারবে না বলে বিটিআরসি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা শুরু করে রোহিঙ্গারা। পর্যায়ক্রমে কক্সবাজারের ছয়টি ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নেয়। আগামী ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার দিন। এই দিনকে সামনে রেখে কক্সবাজার ক্যাম্প এলাকায় বিভিন্ন এনজিও সংস্থা সভা করার অনুমতি চেয়েছে সরকারের কাছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দিনটি যাতে পালন করতে পারে সে ব্যাপারে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যাতে ফলাও করে প্রচার করা হয়, সে ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী সেলের কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।