যুগান্তর ◑ টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের পর এবার ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা ও মামলা গ্রহণে মোটা অংকের অর্থ আদায়, টাকার বিনিময়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার হুমকি দেয়া এবং বিনাকারণে মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায়ের বিরুদ্ধে আইজিপির কাছে রংপুর বিভাগীয় জয়িতা ও পীরগঞ্জের সমাজকর্মী নাহিদ পারভীন রিপা স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগকারীসহ পীরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এসব অভিযোগের সরেজমিন তদন্ত করছেন রংপুর ডিআইজির ইন্সপেক্টর (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ডস) তরিকুল ইসলাম তরিক।
এছাড়াও ওসির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শুকুর উদ্দীন কালু নামের আরও এক ব্যক্তির দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত করছে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ প্রশাসন।
সমাজকর্মী নাহিদ পারভিন রিপার দায়ের করা অভিযোগে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও গ্রামের সোবাহানের কন্যা লিজা আখতার (৩০) তার স্বামী মোহাম্মদ আলীর নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ওসি প্রদীপ কুমার রায় লিজার অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে তাকে দিনের পর দিন হয়রানি করেছেন।
এ ঘটনায় ১৬ মার্চ লিজার সঙ্গে স্থানীয় সমাজকর্মী ও জয়িতা নাহিদ পারভীন রিপা থানায় যান। এ সময় ওসি প্রদীপ কুমার ওই সমাজকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ করেন এবং তাকে থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেন। এতে স্বামীর নির্যাতনের শিকার লিজা আখতার ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে পিতার বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এ ঘটনায় ওসি প্রদীপ কুমার রায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের ডিআইজি, আইজিসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেন সমাজকর্মী রিপা।
এ ব্যাপারে সমাজকর্মী ও জয়িতা নাহিদ পারভীন রিপা বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। মানুষ আইনি সহায়তার জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু পীরগঞ্জ থানার ওসি মানুষের নিরাপত্তার জন্য সুবিচারের সহায়তা না করে নানাভাবে হয়রানি করেন। এতে পুলিশ বাহিনীর সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাই আমিসহ ভুক্তভোগীরা এসব অন্যায়ের সুবিচার চাই।
এছাড়াও পীরগঞ্জ উপজেলার করনাই গ্রামের শুকুর উদ্দিন কালু নামে এক ব্যক্তি ১৯ মে আইজিপিসহ পুলিশের বিভিন্ন দফতরে ওসি প্রদীপ কুমার রায়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, ১২ মে রাতে প্রতিপক্ষরা হামলা চালিয়ে শুকুর উদ্দিন কালুসহ প্রতিবেশীদের বাড়িঘর ভাংচুর করে লুটপাট চালায় এবং তাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে অপহরণ করে। এ ঘটনা ওসি প্রদীপ কুমারকে মোবাইল ফোনে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হলে পীরগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ওসি প্রদীপ তার মামলা গ্রহণ করেননি। বরং প্রতিপক্ষের হয়ে তার (কালু) বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার হুমকি দেন ওসি।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তাহের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ১৮ আগস্ট বিষয়টি তদন্তের জন্য অভিযোগকারী ও তার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন।
অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, ওসি প্রদীপ কুমার রায় যোগদানের পর বেশিরভাগ মানুষ পীরগঞ্জ থানায় আইনি সেবা নিতে এসে আইনি সেবার বদলে হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এ বিষয়ে ওসি প্রদীপ কুমার রায় যুগান্তরের কাছে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তদন্তের কথা স্বীকার করেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-