জে.জাহেদ,চট্টগ্রাম :
কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কারাগারে থাকা আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও মোহাম্মদ লিয়াকত আলীর বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার পাশাপাশি দুটি উপজেলায়।
প্রদীপ বোয়ালখালী এবং লিয়াকত পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। প্রদীপের সারোয়াতলী ইউনিয়ন থেকে লিয়াকতের হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার।
পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশের উত্তর কঞ্জুরী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর গ্রামের বাড়িতে একতলা বিল্ডিং। সেখানে তাঁর সৎভাইয়েরা থাকেন। গ্রামবাসী জানায়, প্রদীপের বাবা মৃত হরেন্দ্র লাল দাশ। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা প্রহরী। তাঁর দুই সংসারে রয়েছে পাঁচ ছেলে ও ছয় মেয়ে। ভাইদের মধ্যে প্রদীপ চতুর্থ।
এই সংসারে অন্য দুই ভাই দীলিপ ও সদীপ। তাঁদের মধ্যে সদীপও পুলিশ পরিদর্শক। আর দীলিপ চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁদের মায়ের নাম জুগল রানী দাশ।
প্রদীপের সৎভাইয়েরা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দুই সন্তানসহ স্ত্রী বাস করেন চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার একটি বাসায়। কর্মসূত্রে প্রদীপ টেকনাফে বাস করতেন। মাঝেমধ্যে নগরীতে আসতেন।
গ্রামের একাধিক বাসিন্দা কথা বলেছেন। তবে তাঁরা পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। এলাকাবাসী জানিয়েছে, প্রদীপের স্ত্রীর নামে তিনটি বড় আকারের দিঘি আছে। আয়তন কমপক্ষে ২০ একর। এ ছাড়া আনুমানিক ১০ কোটি টাকার জমি কিনেছেন। সব জমিই স্ত্রীর নামে বলে নিশ্চিত করেছেন একজন জনপ্রতিনিধি। ওই জনপ্রতিনিধি বলেন প্রদীপের স্ত্রীর নামে কৃষি-অকৃষি জমি আছে। গ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। সবই স্ত্রীর নামে। দেখাশোনা করেন তাঁদের ভাই রণজিত দাশ।
অন্য একজন জানিয়েছেন, কক্সবাজারের কলাতলীতে হোটেল ব্যবসা এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর পাথরঘাটা এলাকায় বাড়ি করেছেন প্রদীপ। তাঁর বেনামি সম্পদ বেশি উল্লেখ করে ওই ব্যক্তি বলেন, কী পরিমাণ অর্থ প্রদীপের আছে সেটা জানি না। কেউ বলে প্রদীপ শত কোটি টাকার মালিক, কেউ বলে দুই-তিন শ কোটি টাকার মালিক। উনি গ্রামে খুব বেশি আসতেন না।
পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ লিয়াকত পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব সামারোপাড়ার বাসিন্দা। বাবার নাম সাহাব মিয়া। তিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন। লিয়াকতের বাড়িতে সেমিপাকা টিনশেড ঘর। বাড়িটি তাঁর বাবার তৈরি করা। বৃহস্পতিবার বিকেলে লিয়াকতের মায়ের সঙ্গে আলাপ হয়।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ভালো নাকি খারাপ সেটা তার অফিস ভালোভাবেই জানে। যেহেতু একটা ঘটনা ঘটেছে, তাই আইনই বিষয়টি দেখবে।’ তিনি আফসোস করে বলেন, ‘কিভাবে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না।’
স্থানীয়রা জানান, লিয়াকত আলী হাবিলাসদ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। হুলাইন ছালেহ নূর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে অনার্সে ভর্তি হন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে। শেষে এমবিএ করেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে। ১০ বছর আগে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়া লিয়াকত আলী গত বছরের শেষের দিকে পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি সোয়াত টিমের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য ছিলেন।
সর্বশেষ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। পদোন্নতির পর কক্সবাজার জেলা পুলিশে গিয়ে যোগদান করেন। গত ১৮ জানুয়ারি বাহারছড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন।
গত ১৮ জানুয়ারি বাহারছড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। সাড়ে ছয় মাস ধরে তিনি এই ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-