গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল ◑
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে টেকনাফের সাধারণ মানুষের মাঝে ওসি প্রদীপকে নিয়ে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ শুরু হয়।
এদিকে মেজর সিনহার বোন টেকনাফ থানার সাবেক (ওসি) প্রদীপসহ ৯ পুলিশ সদস্য আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এরপর গত ৬ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ওসি প্রদীপ চট্রগ্রাম থেকে আটক হওয়ার খবরটি টেকনাফের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশ সদস্যদের কাছে হয়রানির শিকার হওয়া বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী থানার সামনে এসে ভীড় জমিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে।
কেউ বলে আমার কাছ ৫ লাখ নিয়েছে, আবার কেউ বলে আমার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ গুলো জানান দিতে থাকে।
সেই সূত্র ধরে ৭ আগস্ট (শুক্রবার) দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি টেকনাফের সাথে দেখা হয় গত ৭ জুলাই মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ড পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়া নিবাসী মৃত আলী আহাম্মদের পুত্র আব্দুল জলিল প্রকাশ (গুরা পুতুইক্কা) স্ত্রী দুই অবুঝ সন্তানের জননী ছেনুয়ারা (২৬) এবং নিহতের বড় ভাই আব্দুর রশিদ’র সাথে।
কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের স্ত্রী ছেনুয়ারা ক্ষোভের ভাষায় কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তার স্বামী কখন আটক হয়েছে, আটক হওয়ার পর তার সাথে কি হয়েছে, তার নিরপরাধ স্বামী কেন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলো, কেঁদে কেঁদে সেই সমস্ত তথ্য গুলো বলতে শুরু করেন।
তিনি বলেন গত ৭ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত আব্দুল জলিল তার স্বামী সে সিএনজি চালক। স্বল্প আয় নিয়ে তাদের সংসার চলত। এর মধ্যে সংসারের আয় বাড়াতে বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়াটিও শেষ করেছিল। কিন্তু তার স্বামীর বিদেশ যেতে পারেনি।
ছেনুয়ারা জানান বিগত ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার আদালত পাড়া থেকে সাদা পোষাকদারী কয়েকজন লোক তার স্বামীকে আটক করে কোথায় জানি নিয়ে গেছে।
সেই খবরটি পাওয়ার পর তার স্বামীর সন্ধান পাওয়ার জন্য কক্সবাজার-টেকনাফের সংশ্লিষ্ট আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরের দরজায় কড়া নাড়তে থাকি। কিন্তু আমার স্বামীর সন্ধার কেউ দেয়নি।
এই ভাবে দুই মাস গত হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে “আমার স্বামী দুই মাস ধরে নিখোঁজ” শিরোনামে পত্রিকায় সংবাদ প্রচার করি। তাতে কোন লাভ হয়নি। এরপর টেকনাফ থানা থেকে মুক্ত হয়ে আসা এবং থানার হাজতে আটক আসামীদের সহযোগীতার মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামী আব্দুল জলিল টেকনাফ হাজতে আটক আছে।
তারপর থেকে বেশ কয়েকবার স্বামীর সাথে দেখা করার চেষ্টা করি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি দেখা করতে আসলে থানার গেইটে থাকা পুলিশ সদস্যরা তোমার স্বামী এখানে নেই বলে তাড়িয়ে দেয়।
নিহত বড় ভাই আব্দুর রশিদ আরো জানান দীর্ঘ পাঁচ মাস আগে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য থানায় আসে। তবে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে পারেনি।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, (ওসি) প্রদীপ নিজেই বলেছে তোমার ভাইকে বড় মাদক ব্যবসায়ী তাকে যদি বাঁচাতে চাও ৩০ লাখ টাকা নিয়ে আসো এই বলে তাড়িয়ে দেয়। ওসি সাহেবকে বলেছি এত টাকা আমরা কোথায় পাবো স্যার। আমরা গরীব মানুষ, আমার ভাই কোনদিন মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলনা সে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালায়।
এই ভাবে দীর্ঘ ৮ মাস বিগত হওয়ার পর গত মাসের ৭ জুলাই পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আমার ভাই নিহত হয়েছে। লাশ কক্সবাজার মর্গে পড়ে আছে।
উল্লেখ্য, মাদক বিরোধী চলমান অভিযানে গত ৭জুলাই (মঙ্গলবার) ভোররাতের দিকে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের একটি দল উপজেলার মাদক পাচারের ক্রাইমজোন ক্ষ্যত হোয়াইক্যং খারাংখালী সীমান্তে পুলিশের সাথে দুই যুবক নিহত হয়েছিল।
তার মধ্যে এক জন হচ্ছে দীর্ঘ ৮ মাস আগে পুলিশের হাতে আটক হওয়া দুই অবুঝ সন্তানের জননী ছেনুয়ারার স্বামী সিএনজি চালক আব্দুল জলিল প্রকাশ গুরা পুতুইক্কা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-