মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি প্রত্যাহারকৃত টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহারকৃত ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী সহ ৭আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। টেকনাফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (আদালত নম্বর-৩) এর বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাং হেলাল উদ্দিন আসামীদের নিয়োজিত আইনজীবীদের জামিন আবেদন শুনানি পূর্বক আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জেলা হাজতে পাঠানো আসামীরা হলেন- (১) টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, (২) বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের
প্রত্যাহারকৃত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, (৩) এসআই নন্দলাল রক্ষিত, (৪) কনস্টেবল সাফানুর করিম, (৫) কনস্টেবল কামাল হোসেন, (৬) কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও (৭) এএসআই লিটন মিয়া। করোনাকালীন হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম দফে ৪ জন ও দ্বিতীয় দফায় ৩ জন আসামীকে হাজত খানা থেকে কাঠগড়ায় আনা হয়। মামলার বাকী ২ জন আসামী সারেন্ডার করেননি। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন, মামলায় উল্লেখিত ৮নম্বর আসামী এসআই টুটুল এবং ৯ নম্বর আসামী কনস্টেবল মোঃ মোস্তফা নামে কোন পুলিশ সদস্য জেলা পুলিশে নেই।
আসামিদের পক্ষে আদালতে এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া ও এডভোকেট রাখাল চন্দ্র মিত্র জামিন আবেদন শুনানি করেন। পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, এপিপি এডভোকেট সাঈদ হোসাইন, রাষ্ট্র পক্ষে কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাশ এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩১ আগস্ট মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ নিহত হওয়ার পরদিন সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ব্যতীত জেলা হাজতে পাঠানো ৬ আসামী সহ ২১পুলিশ সদস্যকে বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে ৬ জন আসামী আদালতে সারেন্ডার করতে আসে।অপরদিকে, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি ও মামলার ২ নম্বর আসামী প্রদীপ কুমার দাশকে চট্রগ্রাম পুলিশ হেফাজতে রেখে চট্টগ্রাম থেকে এনে কক্সবাজার আদালতে সারেন্ডার করানো হয়।
মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলাটি টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেের আদালতের আদেশ মতে, টেকনাফ মডেল থানায় নিয়মিত একটি হত্যা মামলা হিসাবে ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রুজু করা হয়। যার নম্বর টেকনাফ থানা : ৯/২০২০, যাহার সিআর মামলা নম্বর : ৯৪/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ)। দন্ডবিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি রুজু করার সাথে সাথে মামলার এজাহারভুক্ত সকল আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
মামলার ২নম্বর আসামী- জেল হাজতে যাওয়া টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গত ৪ আগস্ট থেকে অসুস্থ হয়ে ছুটিতে যান।
এদিকে, আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় রুজু হওয়া মামলাটি তদন্তের জন্য র্যাব-১৫ এর কাছে বৃহস্পতিবার ৬ আগস্ট সকালে পাঠানো হয়। বিষয়টি টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি এবিএমএস দোহা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী টেকনাফ মডেল থানা কর্তৃপক্ষ এ মামলার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। অপরদিকে, র্যাব-১৫ থেকে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে মামলার সার্বিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৩১ জুলাই খুন হওয়া মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের বড়বোন ও মোঃ শামসুজ্জামানের সহধর্মিণী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস (৪২) বাদী হয়ে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী সহ ৯জনকে আসামী করে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ৫ আগস্ট সকালে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের সঙ্গী ও ৩১ জুলাই এর ঘটনায় টেকনাফ পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামি সাহেদুল ইসলাম সিফাত সহ ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৬ আগস্ট ৭ আসামি সারেন্ডার করতে আসার আগে বেলা ২ টা থেকেই কক্সবাজার আদালত চত্বর ও আশেপাশে চোখে পড়ার মতো বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-