এক লাখের গরু যেভাবে ১৩ হাজারে কেনেন তিনি!

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ কোরবানির পশুর হাটে বিক্রেতা সাধারণত কিছুটা বেশি দাম চেয়ে থাকেন, আর ক্রেতা চান কমাতে। তবে ‘তিনি’ একেবারেই অন্যরকম মানুষ। একদল সঙ্গী নিয়ে গরু কিনতে যান। তার হয়ে বেশিরভাগ কথা বলে সঙ্গীরা।

তারা পশু বিক্রেতাকে জানায়, দাম যত বেশিই হোক না কোন সমস্যা নেই। শুধু হাটের সবচেয়ে ভালো গরুটা তার চাই। আর এই গরুটাই তার পছন্দ হয়েছে। এরপর এক লাখ ১৩ হাজার টাকায় গরু কিনে নেন তারা। নগদ টাকার বান্ডিল তখনই দিয়ে দেন। পিকআপ ভ্যানে গরু তুলে নিয়ে চলে যান। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই মনে হয়।

তবে মূল ঘটনা ধরা পড়ে আরেকটু পর। ব্যবসায়ী টাকা গুণতে গিয়ে দেখেন, এক হাজার বা ৫০০ টাকার নোটের বদলে সেগুলো কীভাবে যেন ২০, ৫০ আর ১০০ টাকার নোট হয়ে গেছে! সব মিলিয়ে টাকা মাত্র ১৩ হাজার ৮০০।

এমনই অভিনব কায়দায় গরু ব্যবসায়ীদের সর্বস্বান্ত করছিল দু’টি প্রতারক চক্র। অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।

শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রের ৩৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি পিকআপ ভ্যান, একটি প্রাইভেটকার, এক হাজার টাকার ৫৮টি, ১০০ টাকার ৩২৬টি, ৫০ টাকার ৯০টি ও ১০ টাকার ৪৮৭টি নোট জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা হয়েছে।

বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম সমকালকে বলেন, পশুর হাটে অনেক সময় জাল টাকা দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা চালানো হয়। তবে এই চক্র দু’টি একেবারেই ভিন্ন কৌশলে তৎপর ছিল। তাদের প্রচুর সংখ্যক সদস্য বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পশুর হাটে যায়। দলে একজন বয়স্ক মানুষ থাকে, যাকে হাজী সাহেব হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে গরু সামলানোর জন্য একজন রাখাল, পরিবহনের জন্য পিকআপ ভ্যান সবই থাকে। বিক্রেতার চাওয়া দামেই গরু কেনার কথা বলে এবং ধর্মীয় বুলি ছেড়ে তারা একটা আস্থার পরিবেশ তৈরি করে। এরপর ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী টাকাও ঠিকই দেয়। তবে হাসিল দেওয়ার সময় তাদের একজন বিক্রেতাকে টাকাগুলো লুকিয়ে ফেলতে বলে। কারণ হিসেবে জানায়, তারা দাম কম দেখিয়ে হাসিল কম দেবে। বিক্রেতা তাদের অনুরোধ রাখেন। তারা যখন হাসিল দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত তখনই প্রতারক চক্রের একজন ‘হাতসাফাই’ করে ফেলে। মানে বিক্রেতাকে দেওয়া টাকার বান্ডিলগুলো সরিয়ে সেখানে ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার বান্ডিল রেখে দেয়।

ওসি জানান, পশু ব্যবসায়ীদের বোকা বানাতে তারা পুরনো নোটগুলো সংগ্রহ করে। কারণ ১০-১৫ বছর আগের ওই নোটগুলো আকারে বড়। সেগুলো এখনকার ৫০০ বা এক হাজার টাকার নোটের প্রায় সমান। সেই সুবিধা নিয়ে চক্রের সদস্যরা বান্ডিলের ওপর ও নিচে একটি করে ৫০০ বা এক হাজার টাকার নোট দিয়ে ভেতরে ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোট ভরে দেয়। অনেক টাকা দ্রুত গুণতে হয় বলে ব্যবসায়ীরা সাধারণত বান্ডিলের এক কোণা ধরে গুণে থাকেন। ভালো করে যাচাই করার আগে তাদের বোঝার উপায়ই থাকে না যে, ভেতরে কোনো কারসাজি আছে। আবার পুরনো হলেও টাকাগুলো আসল হওয়ায় কোথাও তল্লাশির মুখে পড়লেও তাদের অভিযুক্ত করার সুযোগ থাকে না।

বাড্ডা থানার এসআই মো. হানিফ সমকালকে জানান, দু’টি চক্রের মধ্যে একটির প্রধান ৬২ বছর বয়সী আবুল হোসেন। বেশিরভাগ সময় সে হাজী সাহেব সেজে দলের নেতৃত্ব দেয়। তার চুল-দাঁড়িতে মেহেদী দেওয়া। আপাতদৃষ্টিতে তাকে একজন ধার্মিক মানুষ বলেই মনে হয়। এই সুযোগটিই কাজে লাগায় প্রতারকরা। অপর চক্রের দলনেতার নাম বেলায়েত। সে এখনও পলাতক।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরও তারা এ ধরনের প্রতারণা করেছে। এবার শুধু আফতাবনগর হাট থেকেই দুই দিনে আটটি গরু হাতিয়েছে তারা। এসব গরু দ্রুত দূরের কোনো হাটে নিয়ে বাজারদরের চেয়ে সস্তায় বিক্রি করেছে। কারণ তারা সাধারণত ১০ ভাগের এক ভাগ দাম দিয়ে গরু হাতিয়ে নেয়। তাই কমে বিক্রি করলেও তাদের প্রচুর লাভ থাকে।

গ্রেপ্তারকৃতদের একজন নোয়াখালী, একজন খুলনা ও বাকি সবাই মাদারীপুরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

আরও খবর