হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া ◑
গত চার মাস ধরে কক্সবাজারসহ পুরো বাংলাদেশ করোনা আতঙ্কে। সাধারণ মানুষকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করতে জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যস্ত সময় পার করেছে। ঠিক সেই মুহুর্তে মাদক ইয়াবা কারবারিরা সারা দেশে বিভিন্ন মাধ্যমে মরণ নেশা ইয়াবা পাচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এরই মাঝে কিছু মাদক কারবারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশ মাদক কারবারি রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলে জানা যায়।
কক্সবাজারের মাদক বহনকারি থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে বসবাসকারী শরণার্থী রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার জেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গারা ইয়াবাসহ আটকের পাশাপাশি নিহতদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
৬ জুলাই দিবাগত রাতে নাফ নদী পেরিয়ে সাঁতরিয়ে ইয়াবা নিয়ে অনুপ্রবেশকালে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে ৫০ হাজার ইয়াবা। একটি চায়না পিস্তল ও দুই রাউন্ড কার্তুজ।
নিহতরা হলেন, উখিয়ার কুতুপালং ৫ নম্বর ক্যাম্পের জি ২/ই ব্লকের মোহাম্মদ শফির ছেলে মোহাম্মদ আলম (২৬) ও বালুখালি ২ নম্বর ক্যাম্পের কে-৩ ব্লকের মোহাম্মদ এরশাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ ইয়াছিন (২৪)।
কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবির) ১০ জুলাই দেয়া সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযানে ২৪,২৩,৮৯,১০ টাকা মূল্যের ১১,৪১,২৯৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে ও ৮৯ জন আসামী আটক করা হয়। ৯ জুলাই ভোর ৪ টার দিকে উখিয়া উপজেলার রাজা পালং ইউনিয়নের তুলাতলী জলিলের ঘোনা ব্রিজের পাশে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
২৪ জুলাই টেকনাফে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই রোহিঙ্গা মাদক বহনকারী নিহত হয়েছেন, নিহতরা হলেন, বালুখালী ১ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-এইচ/৩৯ এর বাসিন্দা হাবিব উল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ ফেরদৌস(৩০) একই ক্যাম্পের ছৈয়দ আলমের ছেলে আব্দুস সালাম (৩০)।
২৪ জুলাই উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার বহুল আলোচিত জনপ্রতিনিধি বখতিয়ার মেম্বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়। এরই আগে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের আবছার মেম্বার ইয়াবাসহ আটক হয়।
করোনা ভাইরাসে সব ব্যবসা বন্ধ থাকলেও বন্ধ ছিল না ইয়াবার পাচার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইয়াবা পাচার হয়ে থাকে সীমান্ত এলাকা উখিয়া-টেকনাফ হয়ে। নিত্য নতুন কৌশলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে এসব ইয়াবার চালান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিয়মিত ধরাও পড়ছে ইয়াবার বড় বড় চালান। তবে যারা ধরা পড়ছেন তারা মূল ইয়াবা ব্যবসায়ী নন, বহনকারী মাত্র। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া তাদের কাজ।
তারা পুলিশ, র্যাবের হাতে ধরা পড়লেও আড়ালে থেকে যান মূল ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। টাকার লোভে পড়ে ইয়াবার চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া বহনকারীরা পুলিশ, র্যাবের হাতে ধরা পড়লেও অন্য কোন তথ্য দেন না। এ কারণে পুলিশ মূল ইয়াবা ব্যবসায়ীকে মামলায় আসামিও করতে পারে না। কড়া চেকপোস্ট ও তল্লাশী থাকা সত্বেও কক্সবাজার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবার চালান চলে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিছু জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গাদের কারনে ইয়াবা পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গাদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ইয়াবা সিন্ডিকেট।
পালংখালী ইউনিয়নের আবছার মেম্বার ইয়াবাসহ আটক এবং রাজাপালং ইউনিয়নের বখতিয়ার মেম্বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর নব্য কোটিপতিরা গা ঢাকা দিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল ২৮ জুলাই টেকনাফে আবারও পুলিশের সাথে গোলাগুলির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকা চার যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
টেকনাফ পুলিশ তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২৮জুলাই (মঙ্গলবার) ভোর রাতের দিকে আটক আসামীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশের একটি দল টেকনাফ উপজেলা হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া এলাকায় গোপন জায়গায় লুকিয়ে রাখা মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গেলে অপরাধীরা উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে এতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়।
এরপর আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।
উভয় পক্ষের গোলাগুলি থেমে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকা ৪ যুবককে উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষনা করে।
নিহত যুবকরা হচ্ছে হোয়াইক্যং পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া এলাকার মৃত নুর মোহাম্মদের পুত্র মোঃ ইসমাইল(২৫), একই ইউনিয়ন আমতলী এলাকার আব্দুল মালেকের পুত্র আনোয়ার হোসেন(২৫),
পুর্ব মহেশখালীয়া পাড়া এলাকার মৃত হাকিম মিয়ার পুত্র মোঃ আনোয়া(২৪), খারাংখালী এলাকার আব্দুস সালামের পুত্র মোঃ নাসির(২৩)।
কক্সবাজার র্যাব ১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে র্যাবের প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে।পাশাপাশি মাদক পাচারে জড়িত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। র্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-