মাহাবুবুর রহমান ◑
বর্তমানে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউকে বাংলাদেশের সব চেয়ে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন আইসিইউ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের দাবী দেশের যে কোন হাসপাতালে এরকম আইসিইউ ব্যবহার করলে রোগীদের দৈনিক অন্তত লাখ টাকা খরচ হত। কিন্তু কক্সবাজারের মানুষ অনেক ভাগ্যবান তারা খুব অল্প খরচে সেই উন্নত সেবা পাচ্ছেন। এই আইসিইউকে বিশ্বমানের বলেও দাবী করছেন তারা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে যে আইসিইউ আছে, সেটা একেবারে আন্তর্জাতিক মানের। এখানে শুধুমাত্র হাইফ্লো অক্সিজেন নয় উন্নত মানের ন্যাজাল ক্যানোলা আধুনিক মেশিনসহ জরুরী প্রয়োজনে সব সেবা আছে।
আমি মনে করি, কক্সবাজারের মানুষ অত্যন্ত ভাগ্যবান জেলা শহরে এ রকম আধুনিক সেবা পাচ্ছেন। আমার জানা মতে, দেশের কোন জেলাতে এরকম আধুনিক আইসিইউ বা এইচডিইউ নেই। এটি দেশে ওয়ান অফদ্যা বেস্ট।
তবে তিনি দাবী করেন, অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারের শত চেস্টা এবং আধুনিক সব সুবিধা সেবার দেওয়ার পরও রোগির মৃত্যু হয় এটা স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। তাই সরকারি এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রক্ষায় সবাইকে সচেতন থাকার আহবান জানান তিনি।
এ ব্যাপারে আইসিইউ’র দায়িত্বরত ডা. উত্তম বড়ুয়া বলেন, আমাদের আইসিইউতে রোগি আনার পর রোগির স্বজনদের আর চিন্তা করতে হয়না। সমস্ত দায়িত্ব আমাদের সেবাকর্মীরা নিচ্ছেন। ভেতরে রোগির যাবতীয় অসুবিধা আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা দেখভাল করছেন। অনেক সময় রোগি এমনকি পায়খানা প্রস্রাব করলেও সেগুলোও পরিস্কার করে দিচ্ছেন। আমার মতে, এখানে যে আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং সেবা আছে সেটা আপাতত দেশে অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না।
শহরের রুমালিয়ার ছড়ার গৃহিনী নাসরিন বলেন, আমার স্বামীর করোনা পজিটিভ হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। এরপর আমার দুই সন্তানেরও পজিটিভ আসে। পরে আমার স্বামীর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউতে আনলে তারা সাথে সাথে ভাল এবং উন্নতমানের চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলেন। আমার স্বামী বর্তমানে সুস্থ আছেন; তবে প্রথম ৩ দিনে আমার প্রায় ৬০ হাজার টাকার বিভিন্ন ঔষধ কিনে দিতে হয়েছিল সেখানে। তবুও আমি খুশি কারণ বর্তমানে আমার স্বামী সুস্থ আছেন।
এদিকে টেকপাড়ার জাফর আলম সওদাগরের ছেলে গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমার পিতা একজন হার্টের রোগি। উনার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে প্রথমে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করি।
সেখানেও অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে অনেক চেস্টা করেছেন ডাক্তাররা। পরে করোনা টেস্ট করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসলে আব্বাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যায়।
সেখানে বেশ উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন তিনি। আমরা যদিও ভেতরে যেতে পারিনা তবে খবর নিয়ে জেনেছি আব্বা এখন আগের চেয়ে অনেক সুস্থ আছেন। হাসপাতালের এই আইসিইউর কারণে আমার আব্বাসহ অনেক মানুষের জীবন রক্ষা পাচ্ছে।
হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের কর্তব্যরত একজন নার্স জানান, ঢাকাতে আমার মাকে ৪ দিন আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়ার পর বিল এসেছিল সাড়ে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানেও দেশের যে কোন জায়গায় এরকম আইসিইউ সেবা নিলে দৈনিক কমপক্ষে লাখ টাকার উপরে বিল আসবে সেখানে প্রায় বিনামুল্যে সেবা পাচ্ছেন এখানকার মানুষ এটা খুবই ভালো বিষয়। তিনিও দাবী করেন, এটি বাংলাদেশের ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট আইসিইউ।
এদিকে জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহীন আবদুর রহমান বলেন, এটা যে দেশের সেরা আইসিইউ সেটাতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়া বর্তমানে সেবসহ অনেক প্রতিষ্টান এবং সংগঠন মানবিকভাবে চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে মানুষের সহায়তা করতে এগিয়ে আসছেন। এটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। একই সাথে সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবায় অর্থায়ন করায় ইউএনএইচসিআরকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-