হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া ◑
নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন খেটে খাওয়া মানুষের দিন দিন অস্থিরতা বাড়ছে। একদিকে করোনা মহামারি অন্যদিকে আয় রোজগার বন্ধ করে ঘরে থাকা এ যেন এক অস্থির অসহনীয় জীবন-যাপন। মানুষ কোনোদিন কল্পনাও করেনি এমনটি হবে।
সামান্য জ্বর, সর্দি-কাশি হলে নিজের স্ত্রীও স্বামীকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে। সামাজিক বন্ধনে ফাটল ধরেছে। একের পর এক হাসপাতাল ঘুরেও অসুস্থ ব্যক্তিকে ভর্তি করাতে পারছেন না স্বজনরা। সন্তান প্রসব করতে গিয়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেককে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
মানবতার শহর উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত স্থানীয় এক এনজিও কর্মী জাহাঙ্গির আলমের স্ত্রী সন্তান জন্মদানের সময়ে মারা গেছেন। অসহায় মানুষগুলো ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। আশপাশে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ ঘরে আবার কেউ হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। ভাইরাস জ্বর, কাশি-সর্দি ও ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় প্রতিটি ঘরে।
রেড জোন এলাকা উখিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো চলছে লকডাউন। করোনা ভাইরাসের জেরে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া এখন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দিন দিন করোনায় সংক্রমিত হয়ে পুরো কক্সবাজার জেলায় ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে।
করোনা ভাইরাসে সাংবাদিক, পর্যটন ব্যবসায়ী ও রোহিঙ্গাসহ প্রাণহানি অব্যাহত আছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে করোনা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ থাবা বসায়নি।
পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, করোনার কারণে রেড জোন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে উখিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন চলছে। টমটম ও সিএনজি চালকরা প্রশাসনকে ফাঁকি দিকে দু-একটা ভাড়া মারতেন। এখন প্রশাসনের কঠোর নজরদারির ফলে তারা বেকার সময় পার করছেন।
জীবিকার তাগিদে যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে, চলমান সংকট যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, সেটিও ততই তীব্রতর হবে। এতে করে মানুষের মনোজগতে বড় পরিবর্তন আসবে, বাড়বে সামাজিক অস্থিরতা।
শ্রমিক নেতা শাহ আলম বলেন, করোনাসৃষ্ট চলমান অচলাবস্থা দীর্ঘকাল চলতে থাকলে কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক শৃঙ্খলার ওপর এর ভয়াবহ নেুতবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
উখিয়ার মেধাবী মুখ ঘুমধুম এলাকার নুরুল আবছার অত্যন্ত সততার সাথে চট্রগ্রামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
তিনি দুঃখ করে বলেন, করোনার কারণে আমার চাকরিটা চলে গেল। এখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেকার অবস্থায় অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছি। লকডাউনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠার ক্ষমতা ধনবান ও কালোব্যবসায়ীর থাকলেও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের এবং আমার মতো বেকাররা কতটা টিকে থাকতে পারবে সেটিই বরং অনেক বড় একটি প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
এখন থেকে করোনার ভয়াবহ ছোবলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে, শিক্ষায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে, এমনকি রাজনীতিতেও বিরাজ করছে স্থবিরতা।
আর চিকিৎসা খাতে এতটাই সংকট সৃষ্টি হয়েছে যে, সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে, সেবার পরিবর্তে ভোগান্তি পেতে হচ্ছে।
সামাজিক স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সূর্যোদয় সংঘের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর পরই দেশে অপরাধমূলক কর্মকান্ড হ্রাস পেলেও এখন ফের বাড়তে শুরু করেছে। বাড়ছে বেকারত্ব, প্রতিটি সেক্টরে অস্থিরতা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, তা মানুষের মনোজগতে আঘাত হানছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-