আনছার হোসেন, সিভি ◑
কক্সবাজার শহরের আলোচিত বিডিআর সৈয়দ হত্যাকান্ডের মূলহোতা, ২০ মামলার আসামি মোহাম্মদ আলমগীরের (২৩) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, সন্ত্রাসি ও কিশোর গ্যাং লিডার মোহাম্মদ আলমগীর ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন।
কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ আজ শুক্রবার (২২ মে) মধ্যরাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের ঝাউবাগানের কবিতা চত্বর থেকে ওই যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে।
গত ১৮ এপ্রিল এই মোহাম্মদ আলমগীর, তার ভাই আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার চেয়ারম্যানের মায়ের ঘোনা এলাকায় আবু সৈয়দ ওরফে বিডিআর সৈয়দকে (৬৫) জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল। এই বিডিআর সৈয়দ পারিবারিক সম্পর্কে নিজের বোনের শ্বশুর ছিলেন।
ইতোপূর্বে প্রায় একবছর এই আলমগীরেরই আপন ভাই জাহাঙ্গীর আলম ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছিলেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শাহজাহান কবির জানান, শুক্রবার গভীর রাত দেড়টার দিকে শহরের ঝাউবাগানের কবিতা চত্বরে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়।
তিনি জানান, হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ওই যুবককে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার এবিসি ঘোনার চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকার মোহাম্মদ ফরিদ ওরফে দারোয়ান ফরিদের ছেলে মোহাম্মদ আলমগীরের লাশ হিসেবে শনাক্ত করেন।
ওসি শাহজাহান কবিরের মতে, সন্ত্রাসি ও গ্যাংলিডার এই আলমগীরকে পুলিশ অনেকদিন ধরে খুঁজছে। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।
তিনি অবশ্য ‘ক্রসফায়ারে’ মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তবে একাধিক সুত্র দাবি করছেন, শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমকারি এই যুবককে ৫ দিন আগেই পুলিশ চকরিয়া থেকে ধরে এনেছিল। পরে আজ শুক্রবার গভীর রাতে কক্সবাজার শহরের ঝাউবাগানে গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেল।
ওই সুত্রগুলো ও পারিবারিক সুত্রের দাবি, মোহাম্মদ আলমগীরকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।
কক্সবাজার থানা পুলিশ ওই দাবি নাকচ করে জানিয়েছে, তারা গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। পরে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানান, নিহত আলমগীরের পুরো পরিবারটিই দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আলমগীর ছিল কিশোর গ্যাংয়ের লিডার। প্রায় একবছর আগের তার আপন ভাই জাহাঙ্গীর আলম পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছিলেন। তারা তিন ভাইয়ের মধ্যে বর্তমানে এক ভাই বেঁচে আছেন। আলাউদ্দিন নামের ওই ভাইও বর্তমানে বিডিআর সৈয়দ হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ১৮ এপ্রিল তুচ্ছ ঘটনায় নিজের বোনের শ্বশুর আবু সৈয়দ ওরফে বিডিআর সৈয়দকে জবাই করে হত্যা করেছিল গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া মোহাম্মদ আলমগীর ও তার সহযোগীরা। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছিল।
তখন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছিল, নিহত বিডিআর সৈয়দের এক ছেলে বাড়ির চালের উপর দিয়ে পার হতে গিয়ে প্রতিবেশিদের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। সন্ধ্যা পৌণে ৬টার দিকে এই ঘটনার সুত্রপাত হয়। তখন বিডিআর সৈয়দ বাড়ি ছিলেন না। তিনি আসার পরও দীর্ঘ সময় দুইপক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এক সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রতিপক্ষরা বিডিআর সৈয়দকে জবাই করে হত্যা করে। ওই সময় তার ছেলে জুয়েল বাধা দিতে গেলে তার একটি হাতও কেটে ফেলা হয়।
স্থানীয় একাধিক সুত্র জানিয়েছির, বিডিআর সৈয়দের প্রতিবেশি মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে আলমগীর, আলমগীরের শ্যালক আবদুল জলিলের নেতৃত্বে একদল তাদের উপর হামলে পড়ে এবং ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এক সময় বিডিআর সৈয়দ ও তার ছেলে জুয়েল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হামলাকারিরা পালিয়ে যায়।
পরে কক্সবাজার সদর মডেল থানা ঘটনাস্থলে আসেন। স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ সদস্যরা গুরুতর জখম অবস্থায় বিডিআর সৈয়দ ও তার ছেলে জুয়েলকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। ওখানেই কর্তব্যরত চিকিৎসক বিডিআর সৈয়দকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়দের মতে, বিডিআর সৈয়দের পরিবারের সাথে প্রতিবেশি ওই নিকটাত্মীয়দের আগে থেকেই শত্রুতা ছিল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-