করোনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশে বিদেশিদের চাপ, বিরক্ত সরকার

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস :
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সেখানে নতুন করে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না সরকার। কিন্তু জাতিসংঘ, পশ্চিমা দেশসহ বিভিন্ন মানবাধিকারকর্মী এবং এনজিও কর্মকর্তারা ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশের অনুমতি চাইছে।

এ নিয়ে সরকারকে রীতিমতো চাপ দেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সোজা কথা, করোনা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ছাড়া অন্য কাউকে ক্যাম্পে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তাছাড়া, দেশের মানুষ করোনায় যে পরিমাণ চিকিৎসাসেবা পাবে ঠিক একই সেবা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিশ্চিত করা হবে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যসহ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ৬৩ জন সদস্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে। অনুমতির আবেদনপত্রে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা মহামারি ছড়ালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো করোনামুক্ত রয়েছে। তাদের এখানে কোনো প্রয়োজন নেই।

ঢাকার জবাবের প্রেক্ষাপটে বোল পাল্টে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থীদের চিকিৎসার বদলে ক্যাম্পে থাকা ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তাদের চিকিৎসা দেবার অনুমতি চেয়েছে তারা। কিন্তু এই প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা।

পরবর্তীতে অবশ্য ঢাকা ৬৩ জনের তালিকা থেকে ১৯ জনকে ক্যাম্পে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তারা সবাই চিকিৎসক।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পগুলো এখনো করোনামুক্ত। আমাদের ভয়, সেখানে এখন বাইরের কেউ প্রবেশ করলে তাদের কারো মাধ্যমে না আবার সব ভেস্তে যায়। কিন্তু কিছু লোক ওখানে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। বিভিন্ন রকম লোক ওখানে ঢুকতে চায়। এদিকে ইউএনএইচসিআর আর কিছু রাষ্ট্র যেমন ব্রিটেন আমাদের খুব চাপ দিচ্ছে, তারা আমাদের দেশে লোক নিয়ে আসবে।’

মোমেন বলেন, ‘তারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা মহামারি হলে ওনারা চিকিৎসা দেবেন। আমরা বলেছি, কোনো দরকার নেই। ক্যাম্পগুলোতে এখনো মহামারি হয়নি। ওনারা বলছেন, তারা নাকি করোনাভাইরাস সম্পর্কে এক্সপার্ট (অভিজ্ঞ)। আমরা যাচাই করে দেখলাম, ওনাদের মধ্যে ১৯ জন ডাক্তারি লাইনের। আমরা তাদের ক্লিয়ারেন্স করলাম। আমরা বলেছি, এই মুহূর্তে আমাদের অন্যদের দরকার নেই।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোসহ পুরো কক্সবাজার লকডাউনে আওতায় রয়েছে। তবে ক্যাম্পগুলোর সব জরুরি কার্যক্রম চালু রয়েছে। আর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে করোনা শনাক্তের সংবাদ এলেও এখনো কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীর আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে গত শনিবার রাতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ২৯ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা দলকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে। মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে করোনামুক্ত আর সেখানে জায়গা না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় জাতিসংঘ সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বললাম প্লেন নাই, ওনারা বলল, তারা চার্টার্ড করে নিয়ে আসবে। খুব জরুরি। আমরা বলেছি, কক্সবাজারে খুব জরুরি না। আপনারা আসলে ঢাকায় হোটেলে ওঠেন, কোয়ারেন্টাইট করবেন ১৪ দিন, তারপর কক্সবাজার যাবেন। তারা এতে খুব অসন্তুষ্ট।’

করোনা ইস্যুতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের গাড়ি আনাগোনার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করসছে সরকার। জাতিসংঘের যেসব কর্মকর্তা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছেন, তারা ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান করা অন্যদের ক্যাম্পে প্রবেশে বিধিনিষেধ। এতেও জাতিসংঘ অসন্তুষ্ট বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

নতুন করে কেউ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের অনুমতি চাইলে সরকার তাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে দেখবে বলেও জানান মোমেন।

এদিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। টহল জোরদারের পাশাপাশি ক্যাম্পে বিভিন্ন প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বিদেশিদের অবাধ যাতায়াত।

গত ২ এপ্রিল আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সেনাবাহিনী দেশের সব স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে কঠোরভাবে কাজ করছে। তার ধারাবাহিতায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ত্রাণ, স্বাস্থ্যকর্মী বা সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া কাউকে ক্যাম্পে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

এর পাশাপাশি জনসমাগম এড়াতে চলছে নিয়মিত সেনাটহল। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের হওয়া বন্ধ করতে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নতুন ১০টি চেকপোস্ট স্থাপন করেছে পুলিশ।

গত ৮ এপ্রিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ‘লকডাউন’ করা হয়। করোনার বিস্তার রোধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘনবসতি এলাকা হওযায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও খবর