অনলাইন ডেস্ক ◑ করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবরোধে দেশে বেশকিছু স্থানে লকডাউন বা অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে মানুষকে বাড়িতে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে দুবেলা খাবারের জন্য সাহায্যের আশায় চেয়ে আছেন লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তানেও এ শ্রেণির মানুষের খাবারের জন্য খাদ্যসামগ্রীসহ নগদ টাকা দিচ্ছে সে দেশের সরকার। বাংলাদেশেও এমন ৩৪ লাখ পরিবারকে করোনাকালীন তিন মাসের প্রতিমাসে ২ হাজার কিংবা ৩ হাজার করে নগদ টাকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালায়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এভাবে ৩৪ লাখ পরিবারকে তিন মাস ২ হাজার করে টাকা দিলে সরকারের প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। আর প্রতিমাসে ৩ হাজার করে দিলে প্রয়োজন হবে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা।’
৩৪ লাখ পরিবার কীভাবে নির্ধারণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের, বস্তিবাসী ও ভাসমান জানগণ নিয়ে ২০১৪ সালে একটি সার্ভে করেছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ওই সার্ভেকে ভিত্তি ধরে সারাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, যেমন :- মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলার স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বরদের মাধ্যমে সুবিধা গ্রহীতাদের একটা তালিকা তৈরি করা হবে। তারপর গ্রহীতার প্রত্যেকের নিজস্ব মোবাইল নম্বরে এ টাকা পৌঁছৈ দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছে, এটা করা সম্ভব। তবে এর মধ্যে কিছু মিসইউজ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ উদ্যোগটি চলতি মাসেই বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা রয়েছে সরকারের। এমনকি এ উদ্যোগ আগামী ১৪ এপ্রিল তথা পহেলা বৈশাখে নতুন বছরের শুরুতে ঘোষণা দেয়া হতে পারে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, মানুষকে রক্ষা করতে হলে চলতি ও আগামী বাজেটকে সাধারণভাবে চিন্তা করলে চলবে না। বর্তমানে একটা জরুরি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এটা অনিশ্চিত যে, কতোদিন এভাবে চলবে, সেটা কারও জানা নেই।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে করোনায় দিনমজুর, ফেরিওয়ালা, সাধারণ মানুষ যারা, তাদের কাজে ব্যাপক ব্যত্যয় হয়েছে। এতে করে খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়াটাই স্বাভাবিক। ফলে এ মহূর্তে সবচেয়ে অগ্রাধিকার হচ্ছে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই সরকারের এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এ অর্থনীতিবিদ।
তবে ঢাকাসহ মোট বস্তিবাসীর সংখ্যা কত এ বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ বস্তিশুমারি ও ভাসমান লোকগণনার তথ্যমতে, দেশে এখন বস্তির সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৩৫। বস্তিবাসী ও ভাসমান খানা রয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬১টি। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৫৬টি।
২০১৪ সালের বস্তিশুমারি অনুযায়ী ঢাকা শহরের দুই সিটি করপোরেশনে মোট ৩ হাজার ৩৯৪টি বস্তি রয়েছে। সেখানে মোট ঘরের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজারের মতো। ওই শুমারিতে ঢাকার বস্তিবাসীর সংখ্যা ৬ লাখ উল্লেখ করা হয়। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করা হয়। তছাড়া ২০১৪ সালের পর গত ৬ বছরে এ সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেড়েছে।
এদিকে ২০১৪ সালের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) অপর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনও ৩ কোটি ৮৫ লাখ দরিদ্র মানুষ রয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। প্রায় এক দশকের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি কমেছে।
জিইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৭ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-