করোনার খাদ্য সহায়তা নিয়ে ফটোসেশন, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ফেইসবুক

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

শাহীন মাহমুদ রাসেল ◑

দেশের বৃহৎ অংশের এক শ্রেনীর মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়ায় থেমে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনের চাকা। নিভে গেছে তাদের রান্নার চুলা। ক্ষুধার্ত এ মানুষগুলোর বাড়ী বাড়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার ঘোষনা থাকলেও নেতার সাথে সমাগম হয়ে মানুষের বাড়ী বাড়ী খাদ্য সহায়তার প্যাকেজ নিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে এক শ্রেনীর সেলফিবাজরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতার পক্ষে ত্রান বিতরনের প্রচার চালাচ্ছে।

ফেসবুক খুললেই ক্ষুধার্ত মানুষদের সাথে নেতার অনুসারীদের ছবি দেখা যাচ্ছে, একটি খাদ্য প্যাকেজ বিতরন করতে দেখা যাচ্ছে ১০-১৫জনকে। শুধু নেতারাই নয়, এমন কাণ্ড দেশের অনেককেই করতে দেখা যাচ্ছে।

যেখানে করোনা ভাইরাসের কারণে প্রতিদিনের জীবন ব্যাহত, সেখানে সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়ে উঠেছে মানুষ। বিশ্ব জুড়ে উদ্বেগ ও মৃত্যুর আতঙ্কের মধ্যে অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা। ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক, দেখা মিলছে ফেইক নিউজ, হস্যাত্মক ভিডিও ও ছবি। পূর্বের তুলোনায় এ মাধ্যমে যোগাযোগ বেড়েছে কয়েকগুন। আবার কেউ কেউ ত্রানের নামে ফটোসেশনে মত্ত হয়ে উঠেছেন।

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে উদ্ভট সব কারণকে দায়ী করার পাশাপাশি, চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে প্রকাশ করা হচ্ছে অসংখ্য ভুয়া সংবাদ। এমনকি বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সরকার ঘোষিত তথ্যের চেয়েও বেশি বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন কেউ কেউ। কেউ আবার চিকিৎসকদের নামে রটাচ্ছেন মিথ্যে সংবাদ।

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

সামাজিক মাধ্যমে এ সংক্রান্ত গুজব ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ধরণের ফেইক নিউজ, ভিডিও ভাইরাসের চেয়েও ক্ষতিকর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করে এ ধরনের প্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

শুধু গুজব আতঙ্কই নয়, করোনাকে কেউ কেউ হাস্যাত্মকভাবেও উপস্থাপন করছেন। টিকটক ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করে এটি নিয়ে অনেকটা অবহেলাই করছেন তারা। ঘরে বন্দি থেকে কে কি করছেন তা প্রতি মুহূর্তে প্রকাশ করছেন উদ্ভট ভঙ্গিতে।

শুধু তাই নয়, করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কোথাও বলা হচ্ছে, রসুন, লবঙ্গ, আদাজল খেলে করোনা ভাইরাস ভালো হয়। এ নিয়ে অনেকে বিভিন্ন ওষুধের বিজ্ঞাপনও প্রচার করছেন। যেগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

এসব গুজবের কারণে একদিকে মানুষ যেমন আতঙ্কিত হয়ে পড়বে তেমনি ভুল চিকিৎসার দিকে ধাবিত হয়ে আরও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।

ঘরবন্দি এক নারী নিজের ফেসবুকে লিখেছেন -আমি সব সময় ই খুব পজিটিভ মাইন্ড এর মেয়ে। এই করোনা আমাদের ক্ষতি করছে অনেক, জীবন কেড়ে নিচ্ছে অনেক, ব্যাবসা বানিজ্য, চাকুরী সংসারের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু তাঁর পরেও যারা বেঁচে আছি, যারা ভাগ্যবান তারা নিজেদের সব কিছু পজিটিভ ভাবে নিন।

করোনার ফলাফল যেটা আমি পেয়েছি;
বেশ কিছু লেখা শেষ করেছি। বেশ কিছু ভালো ভালো সিনেমা দেখেছি। বেশ কিছু রান্না করেছি। বাসার বেশ কিছু পূরানো জঞ্জাল পরিস্কার করেছি। আমার মায়ের কাগজ পত্র রেডি করেছি। আমার অনেক পুরানো বন্ধুদের সাথে অনর্গল কথা, ভিডিও চ্যাট করেছি। কম্পিউটার এর অনেক ফাইল ডিলিট করেছি। কবিতা ভিডিও করেছি আরো করবো। আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। বই পরছি – অল্প করে। কাপড়ের ক্লসেট পরিষ্কার করেছি। আমি ১৭টা শাড়িতে টে ফল লাগিয়েছি। একটা দারুণ সুখবর আছে – পরে শেয়ার করবো। মোটা হয়েছি অনেক। ইত্যাদি ইত্যাদি।

আবার এক বাবা নিজের সন্তানের একটি ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন- ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মায়া-ই একমাত্র গভীর ফাঁদ, যেখানে একবার আটকে গেলে, বের হওয়া খুব কষ্টকর ..। কেউ এ সময়ে ত্রানের নামে সেলফি তোলায় ব্যস্ত, আবার কেউ এটি দেখে বিরুপ মন্তব্য করছেন।

এমনই একজন লিখেলেন- দান করা পুণ্যের কাজ! মানুষকে সাহায্য করাও মহৎ কাজ! কিন্তু লোক দেখানোর জন্য দান করা কতটুকু উচিত? মহানবী (সঃ) বলেছেন ডান হাত দিয়ে দান করলে যেন বাম হাত না জানে! আর আমরা কি করছি? ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মানবসেবা করে বেড়াচ্ছি। মানবসেবা এই মুহূর্তে অতীব প্রয়োজনীয়, কিন্তু ঢাক-ঢোলটা কী অতটা প্রয়োজনীয়? মোট কথা সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে করোনা সঙ্কটে ঘরবন্দি মানুষের বিনোদনের ও আবেগের স্থান।

আরও খবর