সাগরপাড়ে পড়ে থাকা শিশুটির ঠিকানা ডিসির বাংলো!

ইমাম খাইর ◑
কক্সবাজার সাগরপাড়ে ১০/১২ ‌দিন ধরে পড়ে থাকা ইমন নামের শিশুটিকে খোঁজে নিজ বাংলোয় নিয়ে গেলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। শুধু নিয়ে যান নি, নিজেই বসে থেকে পছন্দের খাওয়ার খাওয়ালেন, পরালেন নতুন জামা কাপড়। যা একজন প্রশাসক হিসেবে নয়, প্রকৃত অভিভাবকের পরিচয় দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

জনমানবহীন সৈকতে কেবল এক মানব শিশু ও কুকুরের সহাবস্থান নিয়ে তোলা একটি ছবি  ফেসবুক-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবিরত ঘুরতে থাকে। ছবির শিশুটির বয়স বড় জোর ৬/৭ বছর হবে। এই শিশুর আপনজন হিসাবে সঙ্গে ছিল একটি কুকুর। এ নিয়ে সংবাদ হয় বিভিন্ন অনলাই পোর্টালে। বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসকের।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ডিউটিতে গিয়ে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া এই শিশু এবং কুকুরের ছবিটি তার মোবাইলে ধারণ করেন।
অতঃপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শিশুটির সন্ধানে বের হন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (প্রটোকল শাখা, পর্যটন) মোঃ ইমরান জাহিদ খান ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও আইসিটি শাখা) সৈয়দ মুরাদ ইসলাম। বীচ কর্মীদের সহায়তায় শিশুটিকে রাত ১ টার দিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ডিসির বাংলোয়। তাকে পরিচ্ছন্ন করে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

অভিভাবকহীন শিশুটির মুখে জীবনের গল্প শুনেন জেলা প্রশাক মো. কামাল হোসেন। তাতেই আনন্দ খোঁজে পান তিনি।

এ প্রসঙ্গে দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদ বলেন, “জনশূন্য কক্সবাজার সৈকতে কুকুরটিই যখন আপনজন! ” শিরোনামে কালের কন্ঠ অনলাইনে রাতে আমার একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়। আমার ফেসবুক আইডিতে সেই রিপোর্টটি পড়েই জেলা প্রশাসক খুঁজতে শুরু করেন শিশুটির অবস্থান। শেষ পর্যন্ত রাত একটার দিকে সাগর পাড়েই তাকে পাওয়া যায়। রাত সোয়া একটার দিকে জেলা প্রশাসক শিশুটিকে উদ্ধারের খবর দিয়ে জানান – ‘আমি তার অপেক্ষায় আছি। তাকে বাসায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তাকে আগে খাবার দাবার দিয়েই বাদবাকিটা পরে হবে।’

কক্সবাজার ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া বলেন- ‘শিশুটির নাম ইমন। সে নির্জন সাগর পাড়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। তার পাশেই দেখি একটি কুকুরও রয়েছে ঘুমিয়ে।’ তিনি শিশুটির ঘুম ভাঙিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, এই শিশুর বাড়ি মহেশখালী দ্বীপে। মা-বাবা তাকে লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছিল একটি মাদরাসায়। মাদরাসার মৌলভী তাকে পিটুনি দেওয়ায় সে পালিয়ে আশ্রয় নেয় সাগর পাড়ে। গত ১০/১২ দিন ধরেই শিশু ইমন কক্সবাজার সাগর পাড়ে ছিল।

এদিকে, শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (প্রটোকল শাখা, পর্যটন) মোঃ ইমরান জাহিদ খান।

তিনি লিখেন- ‘পর্যটনের দায়িত্ব পাওয়ার পর কক্সবাজারের স্থানীয়গোষ্ঠীর নানা শ্রেণির লোকের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে। পর্যটন নির্ভর খেটে খাওয়া এ লোকগুলোর কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টের স্বীকার মনে হয় বীচে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট বাচ্চাগুলোঃ বিশেষত যখন সে অনাথ।

পেপারে নিউজে আসেঃ এই দুর্দিনে ফাঁকা বীচে কুকুরগুলোর সাথে ছবির শিশুটি একা রাত্রি যাপন করে চলেছে গত ৮/১০দিন ধরে। বীচকর্মিদের বদান্যতায় কোন কোন বেলায় খাবার জোটে, কোন বেলায় জোটে না।
আজ মধ্যরাতে অনলাইন নিউজে ছেলেটির ব্যাপারটা নজরে আসে মান্যবর ডিসি স্যার এর। এই রাতেই ডিসি স্যার বাচ্চাটিকে খুজে পাওয়া যায় কীনা সেটা দেখতে বলেন। বীচকর্মিরা শুরু করে দেয় খোজ করার কাজ। আমি সহকর্মী বড় ভাই সৈয়দ মুরাদকে সাথে নিয়ে যোগ দেই খোজাখুজিতে। এবং অবশেষে আমাদের এক বীচকর্মী তাকে খুজে পায়। এরপর ডিসি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ি ওকে নিয়ে আসি

ডিসি স্যারের বাংলোয়ঃ এরপর পরিচ্ছন্ন করে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করানো। সাথে ওর গল্প শোনাঃ জীবনের গল্প।

লাইফ ইজ বিউটিফুল
ধন্যবাদ স্যার: আপনার নামে এক সিনিয়র স্যার বলেছিলেন,‘আপনি নিজেও যেমন কষ্ট (পরিশ্রম) করেন, অধীনস্থ সবাইকেও তেমন কষ্ট(পরিশ্রম) করান।’ এমন কষ্ট আমাদের সব সময় করাবেন- এটাই আমাদের চাওয়া।

বিশেষ প্রার্থনাঃ করোনার জন্য বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। তবে আমাদের মত গরিব দেশের খেটে খাওয়া কোটি মানুষের হাহাকার এর যেন কোন অন্ত নেই। এই বিপর্যয়ে যাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে, এগিয়ে আসবেন এই গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য।

আরও খবর