এক রোগী নিয়েই নাকাল কক্সবাজার

সুনীল বড়ুয়া ◑

কক্সবাজারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসাবে সনাক্ত হওয়া সেই বৃদ্ধ নারীকে নিয়ে জেলা জুড়েই উদ্বেগ- উৎকন্ঠায় আছে মানুষ। গত মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালেও এই রোগীকে নিয়ে আতংকের শেষ নেই।

কারণ একটাই, হাসপাতালের চিকিৎসক- সেবিকারা পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুপমেন্ট পিপিই ছাড়া এই একজন রোগীকে  চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছেন  ২২ চিকিৎসক-নার্স ও একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ অনেকেই।

যে কারণে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.মোহাম্মদ মহিউদ্দিন,মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ইউনুচসহ ওই রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া ১০ চিকিৎসক, ৮জন নার্সসহ সংশ্লিষ্ঠ ২২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

একই ঘটনায় লকডাউন করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীতে দুইটি,কক্সবাজার শহরে দুইটি ,চৌফলদন্ডীতে একটি ,রামুতে  একটিসহ ছয়টি বাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে শুধু কক্সবাজার জেলা নয়, সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ইউনুচ ওই রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় বর্তমানে হোম কেয়ারেন্টিনে আছেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) সাদিয়া আফরিন কচি।  তাই এই  এই উপজেলায় ছড়িয়েছে  আতংক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মঙ্গলবার প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে চারদিকে অতংক ছড়িয়ে পড়ে।  আতংকে অনেক রোগী হাসপাতাল ছেড়ে  চলে যান। জরুরী বিভাগে রোগীর আগমনও কমে যায়।
চিকিৎসক নার্স ও স্টাফদের মধ্যেও আতংক দেখা দেয়। এমন করোনা আক্রান্ত ওই রোগীর আশে পাশেও কেউ যায়নি।

তবে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান  বলেন, আতংকিত হবার কোন কারণ নেই,সবাইকে সচেতন থাকতে হবে । ওই রোগীর শারীরিক অবস্থার অনেক উন্নতি হচ্ছে। ঢাকা থেকে চিকিৎসকদল এসেছে। তারা ওই রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়াও ওই রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া চিকিৎসক,নার্স,স্টাফ এবং রোগীর পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এমনকি ওই রোগী যেখানে যেখানে গেছেন সব বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

জানাগেছে,৭৫ বছর বয়সী ওই নারীর বাড়ি কক্সবাজারের খুটাখালীতে। গত ১৩ মার্চ তিনি সৌদি আরব থেকে ওমরা পালন শেষে দেশে আসেন। জ্বর, কাঁশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১৮ মার্চ তিনি কক্সবাজার সদর হাসসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে  গত ২২ মার্চ তার নমুনা সংগ্রহ করে  পরীক্ষার জন্য ঢাকা আইইডিসিআর-এর পাঠানো হলে সেখঅন থেকে রিপোর্ট আসে করেনা ভাইরাস পজেটিভ।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন আব্দুর রহমান  জানান, হাসপাতালে ভর্তির সময় রোগীর স্বজনেরা সৌদি আরব থেকে ফেরার সেই তথ্য গোপন করেন। যে কারণে তাকে সাধারণ রোগী হিসাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।  যে কারণে পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুপমেন্ট পিপিই ছাড়া চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েন অনেক চিকিৎসক-নার্স,স্টাফ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

তাদের মধ্যে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন,মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ইউনুচসহ ১০ চিকিৎসক,৮জন সেবিকা ও চারজন স্টাফ  হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।

রোগীর পরিবার সুত্রে জানাগেছে, করোনা আক্রান্ত ওই নারী গত ১৩ মার্চ ওমরা পালন শেষে দেশে ফিরেন। দেশে এসে প্রথমে যান  চট্টগ্রাম শহরে ছোট ছেলের বাসায়। সেখানে তাকে দেখতে আসেন তার আরেক ছেলে। পরদিন (১৪ মার্চ) তিনি চলে আসেন খুটাখালীর নিজবাড়ীতে। সেখান থেকে অসুস্থবোধ করায় ১৭ মার্চ  তাকে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ায় বড় ছেলের বাসায় নিয়ে আসা হয়। ১৮ মার্চ তাকে ভর্তি করা হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে মায়ের সঙ্গী ছিলেন তার মেয়ে সাফিয়া।

তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন,  ইতিমধ্যে এই রোগীর সংস্পর্শ পাওয়া ছয়টি বাড়ি লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে লকডাউন করা হয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজার শহরে দুই ছেলের বাসা,চৌফলদন্ডী ও রামুতে দুই মেয়ের বাড়ি এবং চট্টগ্রামে দুই ছেলের বাসা রয়েছে। এসব বাড়ির লোকজন যেন বাইরে না আসে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষকে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বার বার পরামর্শ দিচ্ছি। প্রয়োজনে  দরিদ্রদের জন্য খাবার সহায়তা দেওয়া হবে।

হোম কোয়ারেন্টিনে ইউএনও

অন্যান্য চিকিৎসক ও নার্সের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত এই রোগিকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ইউনুচ। পরবর্তীতে তিনি পরিবারের সংস্পর্শে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইএনও) সাদিয়া আফরিন কচি।  এদিকে দেশের এমন সংকটময় মুহুর্তে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হোম কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে।

আরও খবর