ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক কক্সবাজারে

শাহীন মাহমুদ রাসেল ◑

নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারী ঘোষিত ছুটি শুরুর আগে কক্সবাজার শহরসহ জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় নগদ টাকা নিতে ভিড় করেছেন গ্রাহকরা।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে দেখা গেছে, গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়। কোথাও কোথাও গ্রাহকদের লাইন ব্যাংকের বাইরেও চলে আসে। যদিও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া গ্রাহকদের ব্যাংক শাখায় না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

তার পরিবর্তে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম বুথ ব্যবহার ও অন্যান্য সেবার জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে। এছাড়া ছুটির সময়ে দেশের সব এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার পাশাপাশি বুথগুলোকে জীবাণুমুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এক্ষেত্রে প্রতিটি বুথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে করোনার কারণে দুর্যোগের মতো পরিস্থিতিতে বাজারে নগদ অর্থ সরবরাহ বাড়াতে নগদ জমা নীতি সুদহারে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ টাকার পরিমাণ বাড়বে, কম সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকাও ধার করতে পারবে।

অন্যদিকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ে আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।

জানা গেছে, সরকার আগামী ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ১০ দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারী-বেসরকারী চাকুরেরা। তবে সাধারণ ছুটিতে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সকল ব্যাংকের লেনদেন কার্যক্রম চলবে। আর ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।

কক্সবাজারের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের টাকা তোলার হার বেড়েছে। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার গ্রাহকদের টাকা তোলার চাপটা বেশি দেখা গেছে। কোথাও কোথাও গ্রাহকদের লাইন ব্যাংকের বাইরেও চলে আসে।

রামুর একটি বেসরকারী ব্যাংকে টাকা তুলতে যাওয়া সাইফুল ইসলাম নামের একজন জানান, টানা ছুটিতে ব্যাংকও বন্ধ থাকার শঙ্কায় টাকা তুলছেন তিনি। তিনি বলেন, যেভাবে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাতে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা বোঝা যাচ্ছে না। ওই কারণে বাসায় নগদ কিছু টাকা হাতে রাখতেই উত্তোলন করছি।

বেসরকারি এফএসআইবি ব্যাংকের রামু শাখায় টাকা উত্তোলন করতে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, এক লাখ টাকা পর্যন্ত এটিএম বুথ থেকে উত্তোলনের জন্য ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু বেশি টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে আসতে হয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তি বলেন, বিভিন্ন জনের কাছে দেনা-পাওনা রয়েছে। পাওনাদাররা টাকা পরিশোধে চাপ দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে সবার মধ্যে ভীতি থাকায় হাতে টাকা রাখছে। নিজের হাতে রাখতে এবং পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা উত্তোলন করছি।

এফএসআইবি ব্যাংক রামু শাখার ব্যবস্থাপক ফরিদুল আলম জানান, কয়েকদিন ধরে গ্রাহকদের টাকা তোলার চাপ ছিল। তবে বৃহস্পতিবার একটু বেড়েছে। অনেক মানুষের ধারণা সরকার ঘোষিত এ ছুটিতে ব্যাংকও বন্ধ থাকবে। তাই সেই আতঙ্কে অনেকে টাকা তুলে হাতে রেখে দিচ্ছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক শাখা ব্যবস্থাপকরা জানান, গ্রাহকের সংখ্যা বেশি হলেও তারা ২০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যেই টাকা উত্তোলন করছেন। খুব স্বল্প সংখ্যক লোক বেশি পরিমাণে টাকা তুলছেন।

আরও খবর