হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া ◑
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্রভাবে আতঙ্কের মধ্যে সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩১ মার্রচ পর্রযন্ত বন্ধ রাখার ঘোষনা দিয়েছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সব কোচিং সেন্টারও এ সময় বন্ধ থাকবে বলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্রযালয়ে বলেছেন, যেকেউ বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে এলে তাকে অবশ্যই ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি এই নির্রদেশ অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরও উখিয়ায় স্কুল কলেজ বন্ধ হলেও কোচিং বন্ধ হয়নি।
গত মঙ্গলবারও উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় কোচিং ও প্রাইভেট পড়াতে দেখা গেছে। যেখানে সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন সেখানে কিছু শিক্ষক টাকার লোভে সকাল সন্ধ্যা ব্যাচ করে কোচিং ও প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। তা অভিভাবকদের ভাবিয়ে তোলেছে।
সচেতন অভিভাক খালেদা আক্তার বলেন, আমার বাড়ির পাশে এক শিক্ষক ব্যচ করে প্রাইভেট পড়ান। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে না গেলেও প্রাইভেট পড়তে ঠিকই ঘর থেকে বের হচ্ছে। কেউ মাস্ক ব্যবহার করছে আবার অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। আমার অনুরোধ, সন্তান যেন একা ঘরের বাইরে বের না হয়।
গতকাল সরেজমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, বালুখালী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক রোহিঙ্গা নারী। সাথে তার তিন সন্তান। কোথায় যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি মালেশিয়া হসপিটালে জ্বর, সরদি, কাশিতে আক্রান্ত হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান। এই সময়ে জ্বর, কাশি থাকলে তা নিয়ে যেন বাইরে বের না হয়। সে যেন ঘরে থাকে। এমন অনেক কথায় রোহিঙ্গারা জানেন না। ক্যাম্প ১৭ এর একাধিক রোহিঙ্গার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
করোনা ভাইরাস সম্পর্রকে জানতে চাইলে জিয়াউর রহমান নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, আমাদের কিছুই হবে না ইনশাআল্লাহ। আমরা মজলুম। আর মজলুমের সাথে আল্লাহ আছেন। ক্যাম্পে কাজ শেষ করে ফেরার পথে কথা হয় স্থানীয় যুবক জাহাঙ্গির আলমের সাথে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারা দেশে স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এখনও এনজিওরা খোলা রাখার সিদ্ধান্তে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ লাখ লাখ রোহিঙ্গার ঘন বসতী, দেশি-বিদেশি এনজিও কর্রতাদের আসা-যাওয়া, চীন-থাইল্যন্ড ও মিয়ানমার হয়ে এ দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ, কক্সবাজারে বিদেশি নাগরিকদের আসা-যাওয়া সব মিলিয়ে আমরা উখিয়াবাসী রয়েছি চরম ঝুঁকিতে।
পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, এখনো কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা আমরা উখিয়াবাসী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছি। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি তিনি যেন আমাদের রক্ষা করেন।
রোহিঙ্গাদের সাথে কাজ করেন ফারহানা নামের এমন একজন নারী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ক্যাম্পে গাদাগাদি করে চলতে হয়। ছোট্র একটি ঘরে ১০/১২ জনের বসবাস। ৩০ বছরের রোহিঙ্গা নারী সানজিদা। তার ৮ জন ছেলে মেয়ে আছে। বড় মেয়েটি বিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশে এসেই। তার স্বামী ও মেয়ের জামাইসহ এই ছোট্র ঘরে তাদের থাকতে হচ্ছে। তারা এনজিওদের কাজ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিসপত্র পাচ্ছেন। করোনার কারণে এনজিওর কাজ বন্ধ হলে আমরা যাব কোথায়? জান্নাত, হাবিবা ও মৌসুমি বলেন,বাংলাদেশে ইতিমধ্যে কয়েকজন আক্রন্ত হয়ে পড়েছে। তাই আমরা যারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করি আমাদের ও রোহিঙ্গাদের সংক্রমণ হওয়ার আগেই এনজিওদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
যেহেতু বিষয়টি খুব আশঙ্কাজনক ও গুরুতর। ক্যাম্পের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে কথা হয় স্থানীয় যুবক হাসান মোহাম্মদ শামীমের সাথে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত আলোচনায় কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশন শব্দ দুটোর ব্যবহার হচ্ছে। এদুটি শব্দের মধ্যে অর্রথগত পার্রথক্য আছে, Quarantine যখন কোনো একক ব্যক্তি বা দল কোনো সংক্রামক ব্যাধি বা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় কিন্তু তাদের মধ্যে রোগের উপসর্রগ এখনো দৃশ্যমান নয়-এমন মানুষদেরকে বাকী সবার কাছ থেকে পৃথক করার নাম হচ্ছে কোয়ারেন্টাইন।
Isolation যখন কোনো ব্যক্তি বা দল কোনো সংক্রামক ব্যাধি বা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমনটা প্রমাণিত হয়, তখন সুস্থ মানুষদের থেকে তাদেরকে আলাদা করে রাখার নাম হচ্ছে আইসোলেশন। অর্থাৎ ভাইরাস আছে এটা প্রমাণিত হলে আইসোলেশন আর প্রমাণিত না হলে কোয়ারেন্টাইন। উভয় পদ্ধতি সংক্রামক ভাইরাসের বিস্তার রোধে দারুণ কার্রযকর।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-