বিভিন্ন ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা

উখিয়া প্রতিনিধি ◑

উখিয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়ার কারনে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগসহ আরো অনেক অভিযোগ উঠে তাদের নামে ।

মঙ্গলবান (১০ মার্চ) সকাল ১১ টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এই সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধির বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, ইউপি সদস্য মৌলভী বখতিয়ার আহমদ বলেন, কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের (সিআইসি) ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম বদলী হওয়ার পর খলিলুর রহমান খাঁন নতুন সিআইসি হিসেবে যোগদান করেন।

তিনি যোগদান করার পর থেকে স্থানীয় লোকজনকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে ভোগছে। একজন সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি কখনো রোহিঙ্গার পক্ষ হয়ে স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘদিনের ফসলি জমি দখল করে এনজিওদের ভাড়া দিতে পারেনা, কিন্তু তিনি এ ধরনের বিতর্কিত কাজ করে যাচ্ছেন বলে সভায় অভিযোগ করেন।

এই ইউপি সদস্য আরো বলেন, শুধু তাই নয়, তিনি রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার কারনে রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এনিয়ে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টির আশংখা করে তিনি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

রোহিঙ্গা অধ্যূষিত এলাকা পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গা সেবার কাজে নিয়োজিত এনজিও, আইএনজিও, প্রশাসনের কারনে পালংখালী ইউনিয়নের দৈনন্দিন কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে।

আর ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যে সমস্ত স্থানীয় লোকজন রয়েছে তারা ক্যাম্প প্রশাসনের শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ক্যাম্পে দায়িত্বরত সিআইসি’রা রোহিঙ্গার পক্ষ হয়ে কাজ করছে। তাদের কাছে স্থানীয়দের কোন মূল্য নেই।
তাই রোহিঙ্গারা নানান অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি এসব বির্তকিত সিআইসিদের তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

তাদের সাথে একমত পোষণ করে আইনশৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যে সমস্ত স্থানীয় লোকজন রয়েছে তারা চরম ঝুকিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ঠ ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি)র কাছে তারা স্বরণাপণ্য হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে লোকজন আমাদের জানিয়েছেন।

এছাড়াও সভায় বক্তারা উখিয়া উপজেলার কোটবাজারে নতুন তৈরীকৃত রাস্তার উপর যত্রতত্র ভাবে গাড়ীর গ্যারেজ ও গাড়ী রাখার ফলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি, যানজটের ফলে মানুষ কষ্ট, স্টেশন এলাকায় রাস্তা বড় হলেও তার কোন সুফল পাচ্ছেনা জনগন। তাছাড়া সীমান্তে চোরাচালান, ইয়াবা ও মাদক বন্ধে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বক্তারা।

বক্তারা আরো বলেন, উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র টমটম বিক্রির হচ্ছে, সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে, এর সাথে যারা জড় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

এসময় সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, যারা টমটমের শো রুম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যত্রতত্র ভাবে গাড়ীর গ্যারেজ ও গাড়ী রাখার ফলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ইউএনও।

তবে ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি)র বিরুদ্ধে যেসব মৌখিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা লিখিত আকারে পেশ করলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রেরণ করা হবে। তিনি মাদক ও মানবপাচার প্রতিরোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মর্জিনা আকতার মরজু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাংগীর আলম, পালংখালী ইউনিয়নের গফুর উদ্দিন চৌধুরী, জালিয়াপালং ইউনিয়নের নুরুল আমিন চৌধুরী, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের অধ্যক্ষ শাহ আলমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।

আরও খবর