বাংলা নিউজ ◑
চট্টগ্রামের মেয়ে মর্জিনা আক্তার। কাজ করেন বাংলাদেশ পুলিশে। চাকরি জীবনে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন পুলিশের এই নারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
নারীদের জন্য পুলিশিং চ্যালেঞ্জিং পেশা। সেটা যদি হয় একটি থানা এলাকা সামলানো তা আরও কঠিন। তবুও পুলিশের পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে এগিয়ে চলছেন নারীরা। কাজের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন নিজেদের। জানান দিচ্ছেন সক্ষমতা।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ওসি মর্জিনা আক্তার।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনো থানার প্রথম নারী ওসি ছিলেন তিনি। সদরঘাট থানার ওসি হিসেবে সামলেছেন ওই এলাকা। কক্সবাজার জেলার প্রথম নারী ওসিও তিনি।
সিএমপির সদরঘাট থানায় দুই বছর ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মর্জিনা আক্তার। বর্তমানে তিনি কক্সবাজারের উখিয়া থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ওসি মর্জিনা আক্তার বলেন, পুলিশিং নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জের। কিন্তু আমরা নারীরা সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম। চাকরি জীবনে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ করতে হয়, করে যাচ্ছি। পুলিশে নারীরা পিছিয়ে নেই, পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছি আমরা।
শিক্ষাজীবনে ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাস করেন প্রথম শ্রেণিতে। এরপর পড়াশোনার পাশাপাশি স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। গার্ল ইন স্কাউটিং বিভাগের প্রথম ব্যাচের একজন ছিলেন মর্জিনা। ছিলেন লিডার ট্রেনার। অর্জন করেন উডব্যাজ। ১৯৯৫ সালে এইচএসসি’র ফলাফলে পান দ্বিতীয় বিভাগ।
১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১০ম স্থান অর্জন করে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ নাম্বার নিয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম সরকারি বিএড কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব অ্যাডুকেশন (বিএড) ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রী সংসদের নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) ছিলেন মর্জিনা। মেধা, দক্ষতা ও সদিচ্ছা থাকলে নারীরাও যে নেতৃত্বদানে সক্ষম তা শিক্ষাজীবনে প্রমাণ দিয়ে এসেছেন পুলিশ কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার।
২০০৩ সালে বাংলাদেশ পুলিশে এসআই হিসেবে যোগ দেন মর্জিনা আক্তার। সারদা পুলিশ একাডেমিতে এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ২০০৪ সালে মর্জিনা আক্তার শিক্ষানবিশ এসআই হিসেবে কক্সবাজার সদর ও রামু থানায় কাজ করেন।
চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর মর্জিনাকে পদায়ন করা হয় কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায়। পরে দীর্ঘদিন কাজ করেন কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা শাখায়।
২০০৭ সালে সিএমপির ডবলমুরিং থানায় পদায়ন করা হয় মর্জিনাকে। ২০০৮ সালে কমিউনিটি পুলিশিং সম্পর্কে জানতে মর্জিনাসহ চার পুলিশ কর্মকর্তাকে নেপাল পাঠানো হয়। পরে বদলি হয়ে কাজ করেন কোতোয়ালী, পাঁচলাইশ থানায়।
২০১২ সালে সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন মর্জিনা আক্তার। ২০১৪ সালে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফেরার পর তাকে ১১ এপিবিএনে পদায়ন করা হয়। ২০১৪ সালে সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৬ সালে একই থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পান মর্জিনা আক্তার।
কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা গ্রামে ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বর জন্ম নেয়া মর্জিনা আক্তার আট ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম। বাবা মোহাম্মদ রফিক মারা গেছেন। মা জয়নব বেগম বেঁচে আছেন। ২০০৮ সালে ব্যাংকার আরিফুল আজমের সঙ্গে বিয়ে হয় মর্জিনা আক্তারের। তার দুই সন্তান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-