এক উপজেলা সামলাচ্ছেন তিন নারী

নারীরা আজ ঘরে বসে নেই, নারীরা আজ ছুটে চলছে পুরো বিশ্বব্যাপী । বাংলাদেশে নারীদের সকল কর্ম ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও সামাজিক নানা দায়বদ্ধতা ও ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে গ্রামীণ জনপদ গুলোতে এখনো নারীদের পিছিয়ে রাখার চেষ্টা করে একটি মহল। তবে এই প্রতিবন্ধকতা জয় করে নারীরা দেখাচ্ছে তাদের কাজ করার মানসিকতা ।

সারাদেশেই আজ দেখা মেলে নারীদের নানারকম সাফল্যের চিত্র। এমন একটি সাফল্যময় ও নারী বান্ধব উপজেলা নেত্রকোনার দুর্গাপুর । এই উপজেলার ইউএনও (ফারজানা খানম), উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (জান্নাতুন ফেরদৌস আরা ঝুমা) ও সহকারী পুলিশ সুপারের (মাহামুদা শারমীন নেলী) মত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদেই দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিন নারী।

মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের ঘেষা ও নীল জলরাশি নদীর তীরবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর। ২৯৩ বর্গ কিলোমিটার এই উপজেলা পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের কাছে এক স্বর্গরাজ্য । তাই প্রশাসনিকভাবে এখানে রয়েছে দায়িত্ব পালনের বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ পূরণে করতে বিগত সময়গুলোতে যেখানে হিমশিম খেয়েছে পুরুষরা ঠিক একই জায়গায় তিন নারীর সম্মেলিত প্রচেষ্টায় আইন শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে এই তিন নারী।

ইউএনও ফারজানা খানম

ইউএনও ফারজানা খানম

এই উপজেলার গ্রামীণ এলাকার পিছিয়ে পড়া নারীরা আজ নারী অফিসার পাওয়া মন খুলে বলছেন তাদের নানা রকম সমস্যা। এছাড়াও বাল্যবিবাহ প্রবণ এই উপজেলায় তিন নারীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে বাল্যবিবাহ। আর শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যেতে পাচ্ছে বিদ্যালয় গুলোতে।

সুসং মহাবিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, আমরা প্রতিটা শিক্ষার্থীই স্বপ্ন দেখি বড় হয়ে কিছু করার। কিন্তু অনেক সময় সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে তা করা হয়ে ওঠে না । তবে আমাদের এই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে নারীরা যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা আমাদের অনেকাংশেই অনুপ্রাণিত করে । তাছাড়া আমাদের সমস্যাগুলো খুব সহজেই তাদের কাছে উপস্থাপন করতে পারি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জান্নাতুন ফেরদৌস আরা ঝুমা

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জান্নাতুন ফেরদৌস আরা ঝুমা

আইনজীবী মানেশ সাহা জানায়, কর্মস্থলে একজন পুরুষের থেকে নারীদের সততা অনেক বেশি। এছাড়াও একজন নারী গুরুত্বের সঙ্গে সব কাজই পালন করে থাকে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারী অফিসার থাকায় গ্রামের সহজ-সরল নারীরাও তাদের সব সমস্যা সহজে তাদের কাছে তুলে ধরতে পারে । তাই বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন করে হলো নারী অফিসার থাকা গুরুত্বপূর্ণ ।

ইউএনও ফারজানা খানম জানান, আমরা তিনজনে মিলে এই দুর্গাপুরকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি । পাশাপাশি আমরা উপজেলা পরিষদের সব কাজে খুব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে আসছি। এই নারী দিবসে নতুন প্রজন্মের নারী শুরু একটা কথাই বলতে চাই নিজেকে কখনো নারী হিসেবে না দেখে একজন মানুষ হিসেবে দেখো।

সহকারী পুলিশ সুপার মাহামুদা শারমীন নেলী

সহকারী পুলিশ সুপার মাহামুদা শারমীন নেলী

সহকারী পুলিশ সুপার দুর্গাপুর সার্কেল মাহমুদা শারমীন নেলী জানায়, আইনি সহায়তার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ আলাদা করে ভাবার কোনো জায়গা নেই । এক্ষেত্রে আমাদের যে বিষয়টি প্রথমে মাথায় নিতে হয় সেটা হচ্ছে কুইক রেসপন্স। আমরা কখনোই জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন করে মেয়েরা একটু আইনি সেবা কম পাবে বা পুরুষরা একটু বেশি পাবে এরকম চিন্তা আমরা করি না । আমরা সর্বদাই চেষ্টা করছি নারী-পুরুষের সমান সেবা দেয়ার। আর এই নারী দিবসে শুধু এক দিনের জন্য যাতে নারীরা সম্মান না পায়, তারা যেনো সারা বছরই এক মানুষ হিসেবে মানুষের সম্মানটা পেয়ে বাচঁতে পারে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জান্নাতুন ফেরদৌস আরা ঝুমা জানায়, দুর্গাপুরে গারো হাজং সকলেই এক সঙ্গে মিলে সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ । এখনকার মেয়েরা কিন্তু ছেলেদের থেকে পিছিয়ে নেই। এখন মেয়েরা ছেলেদের পাশাপাশি সব কাজই সেটা শিক্ষক হোক চাকরি হোক বা প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব।  নিজেকে কখনো নারী মনে করি না জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য।

এক্ষেত্রে আমি একজন নারী হিসেবে গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীরা সহজেই আমার কাছে তাদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতে পারে এটা আমার জন্য এটা ভালো লাগার দিক ।

আরও খবর