এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া ◑
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন জনপদে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের নাম ভাঙ্গিয়ে পাহাড় কেটে মাটি লুটের বাণিজ্যে একাট্টা হয়েছেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতাকমর্ীরা। গত কয়েকমাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১২টি পয়েন্টে নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি লুটের বাণিজ্য অব্যাহত থাকলেও এসব দেখার যেন কেউ নেই। অনেকটা নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে চলেছেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের লোকজন। ফলে একদিকে যেমন সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজার হচ্ছে। তেমনি একের পর এক বেহাত হচ্ছে সরকারি ভুসম্পদ।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফঁাসিয়াখালী রেঞ্জের অধিন চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট এলাকায় মহাসড়কের দুইপাশে সরকারি বনাঞ্চলের ভেতরে পাহাড় কেটে মাটি লুটের বাণিজ্যে নেমেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ বিএনপির নেতাকমর্ীরা। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের নাম ভাঙ্গিয়ে পাহাড় কেটে মাটি লুটের বাণিজ্যে একাট্টা হয়েছেন এসব নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সম্প্রতিক সময়ে উপজেলার ফঁাসিয়াখালী রেঞ্জের অধিন রিংভং এলাকার ১৯৫২ সালের সৃজিত সেগুন বাগান ও কয়েকবছর আগে সৃজিত আগর বাগানের পাহাড় কেটে মাটি লুটে নিয়েছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। স্কেভেটর ও গাড়ি দিয়ে প্রকাশ্য দিদুপুরে সেখানে পাহাড় কেটে তাঁরা মাটি লুটে নেয়ার পর পাহাড়ের ভেতরে বিশাল রাস্তাও তৈরী করেছেন। যাতে আগামীতে পাহাড় কেটে ওই রাস্তা দিয়ে সহজে মাটি লুট করে নিতে পারে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ করেছেন, রিংভং কোনাপাড়া এলাকায় সম্প্রতিক সময়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ও সামাজিক বনায়নের পাহাড় কাটার হিড়িক পড়েছে। সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশাপাশি স্থানীয় ভিলেজার বদিউল আলম ফকিরের রিভার্জ বনভুমি এবং সামাজিক বনায়নের অংশিদার নুরুচ্ছবির একটি প্লটের পাহাড় কেটে লুটে নিয়েছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র।
ভুক্তভোগী নুরুচ্ছবিসহ সামাজিক বনায়নের অংশিদার অনেকেই দাবি করেছেন, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, রিংভং এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ও সামাজিক বনায়নের পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় মাস্টার সরওয়ার আলম, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মনছুর আলম, ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কাশেম, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ফরিদুল আলম, ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি মাহমুদুল করিম, যুবদল নেতা এখলাছ মিয়া, এরশাদ মিয়া, ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুর রহমান, জাফর আলম, তৌহিদুল ইসলাম, ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি আবদুল মান্নান ও সাবেক যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম।
মালুমঘাট ও আশপাশ এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি লুটের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী জামাল হোছাইন বলেন, সবাই ব্যবসা করতে পারে। তাই বলে সরকারী পাহাড় কেটে মাটি ব্যবসা করা কোন বৈধ হতে পারেনা। কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায়ভার দলীয়ভাবে নেয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, শুধু ফাসিয়াখালী রেঞ্জের মালুমঘাট এলাকায় নয়, সমানতালে পাহাড় কাটা চলছে উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের নোয়াপাড়া, গর্জনতলী, সেগুন বাগিচা, মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, ও বিএমচর ইউনিয়নে বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে। কক্সবাজার উত্তর, চট্টগ্রাম দক্ষিন ও উপকুলীয় বনবিভাগের মালিকানাধীন এসব পাহাড় দখল করে এলাকার প্রভাবশালী চক্র স্কেভেটর (মাটি কাটার মেশিন) দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক যোগে পাচার করছে বিভিন্ন স্থানে। উপজেলার অন্তত ১২টি পয়েন্ট থেকে পাহাড় কেটে প্রতিদিন শতাধিক গাড়িতে করে মাটি লুট অব্যাহত থাকলেও বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন রহস্যজনকভাবে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে চলেছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা গত কয়েকমাস ধরে পাহাড় কেটে মাটি লুটের ব্যবসা চালিয়ে গেলেও তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় স্ব স্ব এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা। অভিযোগ রয়েছে, বনবিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে অভিযুক্তরা পাহাড় কেটে মাটি লুটের বানিজ্য চালাচ্ছে নির্ভিগ্নে। বিষটি বনবিভাগের লোকজন জানলেও তারা রহস্যজনকভাবে নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছেন।
পাহাড় কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধিন ফঁাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, রিংভং এলাকায় পাহাড় কাটার ঘটনায় ইতোমধ্যে বনবিভাগের পক্ষথেকে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারপর থেকে সেখানে নতুন করে এখন কেউ পাহাড় কাটছেনা। অপরদিকে মালুমঘাট স্টেশনের পশ্চিম অংশে যেসব এলাকা থেকে মাটি নেয়া হচ্ছে সেগুলো খতিয়ানভুক্ত জায়গা। তারপরও কোন স্থানে এ ব্যাপারে অনিয়ম হয়ে থাকলে বনবিভাগের পক্ষথেকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-